ভোরে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটুন- পাবেন প্রকৃতির প্রশান্তি আর বহু উপকারিতা

ভোরে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটতে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ

হাঁটতে যাওয়া- তা-ইতো হয়ে উঠেনা। আবার ঘাসের উপর- আবার ভোরে। সত্যিই কঠিন, তাইনা? কিন্তু স্বাস্থ্য, সুস্থতা আর প্রশান্তি যদি হয় আপনার কাছে ‘জীবন বাঁচানো’র মতই গুরুত্বপূর্ণ, তখন আর কঠিন মনে হবেনা। হবেই বা কেন? সুস্থতার মত বড় নিয়ামত কি আর আছে? আর আপনি ভোরে খালি পায়ে হাঁটতে যাবেন তো বসের আদেশে নয়, আনন্দের জন্য। আনন্দের খোঁজে নয়, আনন্দ উপভোগের জন্য, প্রকৃতির প্রশান্তির পরশ সারা দেহমনে মেখে নিতে, সারাদিনের জন্য

খালি পায়ে ঘাসে হাঁটা

হাঁটতে যাওয়ার তো এমনিতেই অনেক উপকারিতা আছে-তা আমরা জানি। হাঁটতে যাওয়া শারীরিক ব্যায়ামেরই অংশ, তবে ব্যায়ামের পূর্ণাঙ্গ বিকল্প নয়। আর ভোরে হাঁটতে যাওয়া এই ব্যায়ামের সাথে আরো কিছু বেনিফিট যোগ করে। ভোরে হাঁটতে যাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারিতা, আপনার স্লিপিং সাইকেল (Sleeping Cycle) বা ঘুম চক্র ঠিক রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ আপনি ভোরে হাঁটতে বেরোলে, আজ দিবাগত রাতে আপনার আগে আগে ঘুমিয়ে পড়ার (Early to bed) জন্য দেহ তৈরি থাকবে। আর সকালের বিশুদ্ধ অক্সিজেন পূর্ণ নির্মল বাতাস ফুসফুস ভরে নিতে পারবেন বিনামূল্যে।

আর ভোরে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটতে পারলে আর একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে। আপনি আরো কিছু প্রফিট বা লাভ পাবেন যা আমরা পরের ধাপে জানব। কিন্তু ঘাস পাব কোথায়?- এ প্রশ্নেরও আমরা ফয়সালা করব ইনশাল্লাহ।

ভোরে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটা J.K. Lifestyle এর অংশ

হ্যাঁ, আমি ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) এর কথাই বলছি। ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের লক্ষ লক্ষ অনুসারীরা (Followers) একথা জানেন। আমি আরো আশ্বস্ত করছি, এ লেখাটি পড়লে ভোরে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটার ব্যাপারে আপনার কনফিডেন্‌স আরো বৃদ্ধি পাবে। প্রসঙ্গত ঘাসে হাঁটার ব্যাপারে আমি প্রথম ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের দ্বারাই উদ্বুদ্ধ হয়েছি। এবং ঘাসও খোঁজে পেয়েছি।

ঘাস খোঁজে পাওয়ার চ্যালেঞ্জ- ঘাস পাব কোথায়?

সত্যিই চ্যালেঞ্জিং! কিন্তু তাতে কি? চলুন আগে চাপমুক্ত (Stress free) হয়ে নিই। ঘাস না পেলে কি হবে? ঘাস না পেলে আর কি হবে- শুধু মাটিতে হাঁটব। মাটিও না পাওয়া গেলে শহরের পিচঢালা পথেই হাঁটব। হাঁটার বেনিফিট তো পাওয়া যাবে।

কিন্তু আপনি যদি প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়ার, শিশির ভেজা ঘাসে পা ডুবিয়ে নিজের দেহমনকে জুড়িয়ে নেওয়ার নির্মল আনন্দটুকু পেতে চান, তাহলে আপনাকে চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে। এর মাধ্যমে যে প্রশান্তি আসবে, কোন ডাক্তার এর জন্য প্রেসক্রাইব করেননা, না কোন ওষুধের মাধ্যমে তা পাওয়া যায়। আর চ্যালেঞ্জিং পথে হাঁটাই তো উত্তম, তাই নয় কি?

ঘাস পাওয়ার সম্ভাব্য স্থান:   শহরের অধিবাসীদের জন্য ঘাস পাওয়া দুষ্কর। আপনি শহর, উপশহর, শহরতলী যেখানেই থাকেন না কেন, কোথাও না কোথাও ঘাস খোঁজে পাবেন। পার্কে, পুকুরের পাড়ে, ফুটপাথ বা রাস্তার পাশে, হাইওয়ের পাশে, রেলস্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডের কাছে, ফাঁকা প্লটে, পতিত জায়গা বা জমিতে, নদীর পাড়ে, স্কুল-কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আপনি ঘাস পেয়ে যাবেন। ঘাসের স্থানটি যদি খুব বেশি দূরে হয়, তাহলে সপ্তাহে দুইদিন যান। পাশাপাশি ঘাস ছাড়া খালি মাটি পাওয়া গেলে সেখানেও যেতে পারেন।

আমি নারায়নঞ্জ সদরে থাকি। আমি বুড়িগঙ্গার পাড়ে, একটি স্কুলের মাঠে এবং একটি পতিত জায়গায়- এই তিন জায়গায় ঘাসের সন্ধান পেয়েছি।

ঘাসে হাঁটার স্বাস্থ্য উপকারিতা (Health benefits)

ভোরে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটার অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। এগুলো আমরা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরছি। তবে মনে রাখবেন, এর কিছু কিছু উপকারিতা আপনি ঘাসে না হেঁটে খালি পায়ে মাটিতে হাঁটলেও পাবেন। যাই হোক, আপনি যদি চ্যালেঞ্জকে ভালবাসেন, তাহলে ঘাসে হাঁটাকেই বেছে নিন। আপনার দেহ মনের সামগ্রিক প্রশান্তির জন্যই ভোরে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটা।

দেহমনের প্রশান্তি

ভোরে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটলে সকালের সতেজ নির্মল বাতাসের সংস্পর্শে আসা যায়। ফুসফুস ভরে তরতাজা নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। একই সাথে সকালের শিশির ভেজা ঘাসে পা রাখলে এক অবর্ণনীয় অনুভূতির সৃষ্টি হয়। দেহমনে এক প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়।

মস্তিষ্কের প্রশান্তি

খালি পায়ে ঘাসে হাঁটলে প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে মস্তিষ্ক শিথিল, শান্ত এবং নিরাপদ বোধ করে এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। এতে রক্তচাপের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

সরাসরি মাটির স্পর্শ

ভোরের হাঁটায় সরাসরি মাটির আরমদায়ক স্পর্শ পাওয়ার ফলে শরীর পৃথিবীপৃষ্ঠ বা মাটি থেকে নেগেটিভ চার্জ গ্রহন করে। এই নেগেটিভ চার্জ দেহের মধ্যে নানা কারনে জমে থাকা ক্ষতিকর পজিটিভ চার্জকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে শরীরে ইলেক্ট্রিক চার্জের ভারসাম্য ফিরে আসে। এর ফলে শরীরের প্রদাহ হ্রাস পায়, ঘুমের মান উন্নত হয় এবং সামগ্রিক সুস্থতা বৃদ্ধি পায়। এটি শরীরের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ভারসাম্য ঠিক রাখতেও ভূমিকা রাখে।

শরীরে গতি আনে

খালি পায়ে ঘাস হাঁটলে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। এতে অলসতা ও ক্লান্তি দূর হয়ে কাজে-কর্মে গতিশীলতা আসে।

মেজাজ ফুরফুরে থাকে

খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটলে এনডরফিন নামক এক ধরনের হরমোন ক্ষরণের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এনডরফিন হরমোন ‘হ্যাপি’ হরমোন নামে পরিচিত। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে এই হরমোন থাকলে মন মেজাজ ফুরফুরে থাকে।

পায়ের পেশি মজবুত হয়

ভোরে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটা পায়ের জন্য খুব ভালো ব্যায়াম। এরফলে পায়ের পেশির শক্তি বৃদ্ধি পায়, পায়ের রগ ও লিগামেন্টস, পায়ের গোড়ালি এবং পায়ের পাতায় শক্তি বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। খালি পায়ে ঘাসে হাঁটলে শরীরের কিছু কিছু আঘাত নিরাময় হয়ে যায়।

পায়ের তলার প্রেসার পয়েন্ট সক্রিয় হয়

খালি পায়ে ঘাসে হাঁটলে আপনার পায়ের তলায় থাকা কিছু প্রেসার পয়েন্ট অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্ক এবং শরীর আরও বেশি করে অ্যাকটিভ বা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

দেহ বিষমুক্ত (Detoxify) হয়

খালি পায়ে ঘাসে হাঁটলে মানসিক প্রশান্তি আসে ও স্ট্রেস কমে। ফলে দেহে শারীরিক ও মানসিক ডিটক্সিফিকেশন হয়।

ভাল ঘুমের ক্ষেত্র তৈরি হয়

ভোরে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটলে আমাদের যে ঘুম-জাগরন চক্র বা Circadian Rhythm- সেটা ঠিক থাকে। এবং রাতে আগে আগে সঠিক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য দেহ তৈরি হয়ে থাকে।

মন্তব্য করুন