কোষ্ঠকাঠিন্য/কষা পায়খানার কারণে কষ্ট পাচ্ছেন? বেছে নিন সহজ ঘরোয়া প্রাকৃতিক সমাধান

কোষ্ঠকাঠিন্য(Constipation) বা কষা পায়খানা হলো এমন একটি অবস্থা যখন কারো পায়খানা করতে সমস্যা হয়, পায়খানা ক্লিয়ার হয়না বা পায়খানা শক্ত হয়ে অন্ত্রে (Gut) আটকে থাকে।

Diabetes check-up

ডাক্তারী ভাষায় কোষ্ঠকাঠিন্য কি

সাধারনভাবে, আমাদের খাওয়া খাবারের পুষ্টি অংশটুকু বাদ দিয়ে অপাচ্য বা অপ্রয়োজনীয় অংশ পেট থেকে ১২ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বাহির না হলে, তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় ২৪ ঘ্নটায় একবার বা দুইবার মলত্যাগ হয়। বিভিন্ন লোকের মলত্যাগ বা পায়খানার নিয়ম ভিন্ন। কারো ২৪ ঘ্নটায় একবার বা দুইবার কারো ২/৩ দিন পর পর পায়খানা হয়।
কেউ তিন দিন পর পর পায়খানা করলেও যদি পায়খানা ক্লিয়ার হয়ে বেরিয়ে আসে বা কোন অসুবিধা বোধ না করে, তাহলে তা কোষ্ঠকাঠিন্য(Constipation) নয়। ফলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারন নেই।

এবার আমরা সাধারনত যে যে কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে তা জেনে নি-

  1. অন্ত্রের বা পেটের সমস্যা
  2. পর্যাপ্ত পানি পান না করা
  3. ফাইবারযুক্ত খাবার কম খাওয়া
  4. শারীরিক কার্যকলাপ (Physical activity) অর্থাৎ ব্যায়াম, কায়িক শ্রম না করা
  5. রোগ (যেমন- ম্যালেরিয়ে, টাইফয়েড) এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে
  6. কিছু ঔষধ (যেমন- ব্যথানাশক ওষুধ, আয়রন সাপ্লিমেন্ট, এবং অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট) এর পার্শপ্রতিক্রিয়া হিসাবে
  7. কোয়ালিটি ঘুমের অভাবে
  8. ঘন ঘন পায়খানা চেপে রাখা ইত্যাদি

যাই হোক, কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পেটে অস্বস্তি, পেট ব্যথা, পেট ফোলাভাব এবং পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদী। দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে অর্শ্বরোগ, এনাল ফিশার, মল আটকে থাকা, IBS এর মত জটিল স্বাস্থ্য অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। চূড়ান্ত পর্যায়ে কোষ্ঠকাঠিন্য কোলন ক্যান্সারেও রূপ নিতে পারে।

এবার আমরা সাধারনত যে যে কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে তা জেনে নি-

কোষ্ঠকাঠিন্য (Constipation) এর প্রাকৃতিক সমাধান

যদি এমন হয়-কয়েক দিন বা সপ্তাহ ধরে আপনার পায়খানা ক্লিয়ার হচ্ছেনা। পেটে অস্বস্তি হছে, পেটটা ফেঁপে আছে- এক্ষেত্রে আপনি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন।

সাময়িক কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পেট ক্লিয়ার করতে আপনি নিচের পদ্ধতিগুলো এপ্লাই করতে পারেন। সবগুলো পদ্ধতিই যে আপনার জন্য প্রয়োজনীয় হবে বা উপযোগি হবে- সেটা ভাবার কোন কারন নাই। আপনি কোনটি বা কোন পদ্ধতিগুলো আপনার জন্য সুবিধাজনক তা নিজেই ঠিক করে নিতে পারেন।

➤ ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া

নিয়মিত ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হবারই কথা নয়।

ফাইবারযুক্ত খাবার হল কার্বোহাইড্রেটযুক্ত সেই সমস্ত খাবার যা আমরা হযম করতে পারিনা। এগুলো পরিপাক ছাড়াই বৃহদন্ত্রের দিকে এগিয়ে যায় এবং পায়খানার সাথে বেরিয়ে যায়। ফাইবারযুক্ত খাবার পানি ধরে রাখে, ফলে পায়খানা নরম হয়ে বেরিয়ে আসে।

ফাইবারযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে- উটস্‌, মটরশুটি, তিষির বীজ, ছোলা, আপেল, নাশপতি, পাকা কলা, চিয়া সীড ইত্যাদি। সবচেয়ে বেশি ফাইবার রয়েছে চিয়া সীড এ। প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে ৩৪ গ্রাম ফাইবার রয়েছে।

আপনি দ্রুত ফল পেতে চাইলে চিয়াসীড পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালিপেটে বা রাতে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন। প্রতিদিন চিয়াসীড খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। চিয়াসীড দীর্ঘ সময় ভিজিয়ে খাওয়াতে উপকার পাওয়া যাবেনা। এক গ্লাস পানিতে ১/২ চামচ চিয়াসীড নিয়ে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে নিয়ে খেয়ে ফেলুন।

চিয়া সীড খেলে ৩/৪ দিনের মধ্যেই ভাল রেজাল্ট পাওয়া যাবে। যদি চিয়া সীড সপ্তাহখানেক খাওয়ার পরেও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর না হয় বা উপকার না পাওয়া যায়, তবে অন্য উপায় অবলম্বন করতে হবে অথবা ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

➤ ইসবগুলের ভুসি খাওয়া

ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিষ্ময়কর কাজ করে।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম

  • একগ্লাস পানিতে ১-২ চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে সাথে সাথেই খেয়ে নিতে হবে। ইসবগুলের ভুসি দীর্ঘক্ষন পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর কার্যকারিতা কমে যাবে।
  • এটা ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার একটা সাধারন নিয়ম। এছাড়া বয়স ভেদে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার আলাদা নিয়ম আছে। ইসবগুলের ভুসি খেলে দৈনিক অন্ততঃ ২ লিটার পানি খাওয়া প্রয়োজন।
  • নিয়মিত ইসবগুলের ভুসি খেয়ে যাওয়া সঠিক পদ্ধতি নয়।
  • ইসবগুলের ভুসি ডাক্তাররাও প্রেস্ক্রাইব করে থাকেন। ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন পেলে সেই অনুযায়ী খেতে হবে।

➤ ফলমূল শাকসব্জি খাওয়া

ফলমূল শাকসব্জি তো খাদ্যের সার্বিক ভারসাম্যের প্রয়োজনে খেতেই হবে। এগুলোর উপকারিতার কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে যদি দৈনিক ডায়েটে ফলমূল শাকসব্জি কম থাকে, তাহলে খাদ্য তালিকায় বাড়িয়ে নিন। নিয়মিত ফলমূল শাকসব্জি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের চ্যালেঞ্জ সহজে মোকাবেলা করতে পারবেন।

➤ আলুবোখারা খাওয়া

এখন কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকারগুলির মধ্যে একটি হল আলুবোখারা। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং এতে সরবিটল থাকে, যা অন্ত্রে জল টেনে নেয়। দুই থেকে তিনটি আলুবোখারা রাতারাতি গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে, তারপর পানি পান করে এবং সকালে আলুবোখারা খেয়ে, আপনি বড় পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

➤ অলিভ অয়েল

সকালে খালি পেটে এক টেবিল চামচ জলপাই তেল খান। সাথে স্বাদ হালকা করার জন্য আপনি সামান্য লেবুর রস যোগ করতে পারেন। এটি পরিপাকতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে, যা কোলনের মাধ্যমে মলকে সহজে সঞ্চালিত করতে সাহায্য করে।

➤ তিসির বীজ

তিসির বীজও দুর্দান্ত। সম্পূর্ণ গুঁড়ো, ভিজিয়ে রাখা, বা সিদ্ধ করা, বা তিসির বীজের তেল। এই সহজ প্রতিকারটি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য চমৎকার। এটি ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। তেলটি অন্ত্রকে লুব্রিকেট করে এবং উদ্দীপিত করে, যা আসলে পায়খানা নির্গমন সহজ করে তোলে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের তাৎক্ষনিক সমাধান সাপোজিটরি (Suppository)

আপনার যদি পায়খানার চাপ হয় কিন্তু শক্ত হওয়ার কারনে বের হচ্ছেনা, তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যের তাৎক্ষনিক সমাধান হিসাবে পায়খানার রাস্তায় সাপোজিটরি ব্যবহার করে পিচ্ছিল করে পায়খানা ক্লিয়ারেন্সের ব্যবস্থা নিতে পারেন।

এর জন্য আপনাকে ব্যবহার করতে হবে গ্লিসারিন সাপোজিটরি (Gglycerin Suppository)। এটা বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন নামে থাকতে পারে। এটা আপনি ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ঔষধের দোকান থেকে কিনে ব্যবহার করতে পারেন।

গ্লিসারিন সাপোজিটরি ব্যবহারের নিয়ম: সাপোজিটরিটি কিছুক্ষন পানিতে ভিজিয়ে নেবেন। তারপর বাম কাত হয়ে শুয়ে হাঁটু ভাজ করে পায়খানার রাস্তায় ঢুকিয়ে দেবেন। ১০/১৫ মিনিট অপেক্ষা করবেন। এটা পায়খানার রাস্তাকে নরম ও পিচ্ছিল করে দেবে। পায়খানার চাপ হলে পায়খানা সেরে নেবেন।

দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য (Long-term Constipation) এর সমাধান

উপরোক্ত ব্যবস্থ্যাগুলি গ্রহন করার পরও যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য না যায়, অর্থাৎ

আপনার যদি দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্যের রেকর্ড থাকে বা আপনি যদি মাসের পর মাস ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন, তাহলে সেটা হতে পারে আপনার কোন রোগের সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্যা বা লাইফস্টাইলজনিত সমস্যা।

তার জন্য আপনাকে ডাক্তারের কাছে গিয়ে রোগের চিকিৎসা করাতে হবে বা লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে।

যাই হোক, দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে অন্য একটি পোস্টে আলোচনা করব, ইনশাল্লাহ।

শেষকথা

কোষ্ঠকাঠিন্যকে আমরা একটি ছোট খাট রোগ বলেই জানি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য কী ভয়ংকর স্বাস্থ্য সমস্য সৃষ্টি করতে পারে, তা তো আমরা এতক্ষণ জেনেছি।

আমরা এই কৌশল অবলম্বন করব যে, সব সময় Gut ক্লিয়ার রাখব এবং কোষ্ঠকাঠিন্যকে দূরে রাখব। তাহলেই কোষ্ঠকাঠিন্যের বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে পারব।

পোস্টটি শেয়ার করে দিন।
কমেন্ট করুন প্লিজ, আপনার কমেন্ট এপ্রিশিয়েট করা হবে।

মন্তব্য করুন