প্রিয় স্বাস্থ্য সচেতন বন্ধুরা –
খাদ্য সম্পর্কে আমরা সহজভাবেই বুঝিয়ে দেব। আপনার মত করে, আপনার ভাষায়। নিজের খাবারের ভালমন্দ নিজেই বুঝতে, রোগ থেকে বেঁচে থাকতে এবং ডাক্তারের কথা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোন নির্দেশনা নিজেই বুঝতে যা যা দরকার, তার সব কিছুই ফোকাস করা হবে। তবে জটিলতা চাপিয়ে দেওয়া হবেনা। এত Details তাত্ত্বিক কথাবার্তায় আমরা যাবনা। সাধারনভাবে খাদ্য সম্পর্কে সবকিছু জানব প্র্যাক্টিক্যালি।
বাঙালির খাবারেই আছে সব খাদ্য উপাদান
মাছে-ভাতে বাঙালি- একথা কে না জানে? মাছ রান্না করতে গেলে তেল তো লাগবেই। প্রাচীন কাল থেকেই বাঙালি সরিষার তেল দিয়ে মাছ-তরকারি রান্না করে আসছে। আর মাছ-ভাতের মতই বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার হল সব্জি। সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা কৃষিপ্রধান এই দেশে বাঙালির খাদ্য তালিকায় সব্জি থাকবেনা, তা ভাবাই যায়না। এখন এই চারটি প্রধান খাদ্য থেকে আমরা চার ধরনের খাদ্য উপাদান পাই; অর্থাৎ- ভাত থেকে শর্করা, মাছ থেকে প্রোটিন, তেল থেকে চর্বি আর সব্জি থেকে ভিটামিন। আর বাকি থাকে খাদ্যের দুটি উপাদান- (১) খনিজ লবন যা আমরা খাবার লবন ও সব্জি থেকে পাই (২) পানি- যা পানি পান করার মাধ্যমে পাই।
তাহলে তো আমরা খাদ্যের প্রধান উপাদানগুলি বা ভাগগুলি জেনে গেছি, তাইনা। অর্থাৎ-
খাদ্যের প্রধান ভাগ ছয়টি
➤ শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrate):
মনে রাখার সুবিধার্থে বলা যায়- প্রধানত চাল, গম ও চিনি থেকে উৎপন্ন খাবার হল শর্করা। যেমন- ভাত, রুটি, বিরিয়ানি, পোলাও, চিনি, মুড়ি, চিড়া, মিষ্টি, পিঠা ইত্যাদি। এগুলো হল শর্করা প্রধান খাবার; অর্থাৎ এ খাবারগুলোতে শর্করার ভাগ বেশি। এছাড়া ফল, দুধ ইত্যাদিতেও শর্করা আছে, কম পরিমাণে।
আমদের শিখে রাখা প্রয়োজন- দুধের শর্করাকে বলা হয় ল্যাক্টোজ, ফলের শর্করাকে বলা হয় ফ্রুক্টোজ এবং চিনির শর্করাকে বলা হয় সুক্রোজ।
আরো জানা প্রয়োজন- শর্করাকে বলা হয় চিনি জাতীয় খাবার। কারন- শর্করা খাওয়ার পর এর নির্যাস চিনি আকারে রক্তে ভাসতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ইনসুলিনের সাহায্য নিয়ে কোষে জমা হয়।
শর্করার কাজ: শর্করার প্রধান কাজ শরীরে শক্তি জোগানো। অর্থাৎ আমরা প্রতিদিন যে দৈহিক কাজ করি, পরিশ্রম করি, তার শক্তিটা প্রথমত আসে শর্করা থেকে। সেই কারনে যারা অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম করে (যেমন- কৃষক, শ্রমিক) তারা প্রচুর শর্করা খেলেও কোন সমস্যা হয়না, কারন শর্করার জমাকৃত শক্তি খরচ হয়ে যায়। কিন্তু যারা শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করেনা, তারা শর্করা বেশি খেলে তার অব্যবহৃত অংশ দেহের কোষে চর্বি হিসাবে জমা হয়, যা ডায়াবেটিসের মত রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী।
➤ আমিষ বা প্রোটিন (Protein):
সহজে মনে রাখতে বলা যায়, আমিষ বা প্রোটিন হল মাছ, মাংস ও ডাল জাতীয় খাবার। প্রোটিন দুই ধরনের। প্রানি থেকে পাওয়া প্রোটিন ও উদ্ভিদ থেকে পাওয়া প্রোটিন। প্রানি থেকে পাওয়া প্রোটিন এর মধ্যে রয়েছে- মাছ, মাংস, ডিম, শুঁটকি ইত্যাদি। আর উদ্ভিদ থেকে পাওয়া প্রোটিন হল- ডাল, চিনাবাদাম, শিমের বীচি ইত্যাদি।
জেনে রাখা প্রয়োজন প্রানিজ প্রোটিনের সবচেয়ে বড় উৎস চিনি এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের সবচেয়ে বড় উৎস শুঁটকি মাছ।
প্রোটিনের কাজ: প্রোটিনের প্রধান কাজ দেহের বৃদ্ধি ঘটানো ও ক্ষয়পূরণ করা। অর্থাৎ আমাদের দেহের যে মাংস বা মাংসপেশি- তা প্রোটিন দিয়েই গঠিত। প্রোটিনের অভাব পূরণ না হলে দেহ ভেঙ্গে পড়বে, ক্ষয়প্রাপ্ত হবে। আবার দেহের ক্ষয় পূরণও করে প্রোটিন। সেই কারনে, শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পরিমাণে প্রোটিন দিতে হবে।
➤ চর্বি বা ফ্যাট (Fat):
চর্বি বা ফ্যাট হল এক কথায়, তেল জাতীয় খাবার। খাবার তেল, ঘি, ডাল্ডা, মাখন, চর্বি- এসবই চর্বি জাতীয় খাবার। ডিমের কুসুমে চর্বি আছে। একজন সুস্থ সবল পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির দিনে ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম চর্বির প্রয়োজন হয়।
চর্বির কাজ: চর্বির প্রধান কাজ দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করা। দেহে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া যেমন ক্ষতিকর, প্রয়োজনীয় চর্বির অভাব পূরণ না হওয়াও তেমনি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারন।
➤ খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন (Vitamin):
ভিটামিন হল প্রধানত শাকসব্জি ও ফল জাতীয় খাবার। কিন্তু শাকসব্জিতে শুধু ভিটামিনই থাকে তা কিন্তু নয়। শাকসব্জিতে থাকে পর্যাপ্ত খনিজ লবন ও পানি। এছাড়া অল্প পরিমানে শর্করাও থাকে। ভিটামিন অনেক ধরনের হতে পারে, যা আমরা পরবর্তী ধাপে আলোচনা করব।
ভিটামিনের কাজ: ভিটামিনের প্রধান কাজ দেহের রোগ প্রতিরোধ করা। ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে সাহায্য করে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উদ্দীপনা জোগায়। আমাদের দেহের সার্বিক সুস্থতার জন্য ভিটামিনের গুরুত্ব অপরিসীম। ভিটামিনের অভাবে দেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়।
➤ খনিজ লবন বা মিনারেল সল্ট (Mineral Salt):
লবন বলতে আমরা সাধারণত আমাদের যে সাদা বর্নের খাবার লবন, সেটাইকেই চিনি। খাবার লবন হল সোডিয়াম লবন (সোডিয়াম ক্লোরাইড)। এছাড়াও আছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, আয়োডিন, ফসফরাস, সালফার, জিঙ্ক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের লবন। দেহের জন্য প্রত্যেকটিরই আছে আলাদা আলাদা গুরুত্ব। বিভিন্ন লবনের অভাবে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের রোগ।
আমরা সমুদ্র জল থেকে আহরিত সোডিয়াম লবন এবং স্থলভাগ থেকে আহরিত আয়োডিন লবন দানাদার লবন হিসাবে হাতের কাছে পাই। এছাড়া অন্যান্য লবন আমরা বিভিন্ন শাকসব্জি ও ফলমূল ও বিভিন্ন খাবার থেকে পেয়ে থাকি। যেমন- কচুশাক থেকে আয়রন পাই, দুধ, দই, ছানা থেকে ক্যালসিয়াম পাই, কলা ও ডাবের পানি থেকে পটাশিয়াম পাই ইত্যাদি।
লবনের কাজ: খনিজ লবন দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য উপাদান। খনিজ লবণ দেহের গঠন ও দেহের অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হাড়, দাঁত, পেশি, এনজাইম এবং হরমোন গঠনের জন্য খনিজ লবণ একটি অপরিহার্য উপাদান। স্নায়ুর উদ্দীপনা, পেশি সংকোচন, দেহকোষে পানির সাম্যতা বজায় রাখা, এসিড ও ক্ষারের সমতাবিধান করা- এসব কাজে খনিজ লবণের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
খনিজ লবন সম্পর্কে নিচের আমাদের অন্য একটি পোস্ট আছে-
পড়ুন: দেহের ‘ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স’ কি? কিভাবে ব্যালেন্স করব?
➤ পানি (Water):
জীবন রক্ষার প্রয়োজনে অক্সিজেনের পরেই পানির স্থান। দেহের গঠন ও অভ্যন্তরীণ কাজ পানি ছাড়া চলতে পারে না। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈহিক ওজনের ৫০% থেকে ৬৫% ই পানি। সুতরাং আমাদেরকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পান করতে হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের সাধারনভাবে দৈনিক দেড় থেকে দুই লিটার পানির প্রয়োজন। আর ঘাম ঝরানো ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করলে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি প্রয়োজন।
খাবার পানির মাধ্যমে ছাড়াও আমরা শাকসব্জি ও ফল থেকে পানি পেয়ে থাকি।
পানির কাজ: পানি ছাড়া দেহের অভ্যন্তরীণ কাজ চলতে পারেনা। পানি ছাড়া দেহে কোন রাসায়নিক ক্রিয়া চলতে পারেনা। একমাত্র পানির মাধ্যমেই দেহে রক্ত সঞ্চালন সম্ভব হয়। রক্তে পরিবাহিত খাদ্য উপাদান এবং অক্সিজেন পানি দ্বারা বাহিত হয়ে দেহকোষে পৌঁছে। আমাদের পরিপাককৃত খাদ্য উপাদান পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্য দিয়ে আমাদের রক্তে শোষিত হয়।
ক্যালরিযুক্ত খাবার মানে কি?
আমরা প্রায়ই শুনে থাকি, ক্যালরিযুক্ত খাবার কম বা বেশি খাওয়ার কথা। তাহলে জেনে নিই- ক্যালরিযুক্ত খাবার কি।
ক্যালরি হল শক্তি বা তাপের একক। তাহলে বুঝতেই পেরেছেন, ক্যালরিযুক্ত খাবার মানে হল যে খাবারে ক্যালরি আছে বা শক্তি আছে। আর খাদ্যের মধ্যে যে প্রধান ছয়টি ভাগ, তার মধ্যে প্রথম তিনটি- শর্করা, প্রোটিন ও চর্বি হল কালরিযুক্ত খাবার। আমাদের হাঁটতে, চলতে, কাজ করতে যে তাপ ও শক্তির প্রয়োজন এবং আমাদের দেহ গঠনের উপাদান- আমরা এই খাবারগুলো থেকে পাই।
শর্করা, প্রোটিন ও চর্বির মধ্যে কতটুকু খাদ্যে কতটুকু ক্যালরি আছে তাও কিন্তু মাপা যায়। যেমন- ১০০ গ্রাম মুরগির মাংসে ১৬৫ ক্যালরি, ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ৪৩৫ ক্যালরি থাকে। আকারের উপর নির্ভর করে একটি ডিমে ৫৫ থেকে ৮০ ক্যালরি থাকে।
তাহলে শর্করা, প্রোটিন ও চর্বি ছাড়া অন্য যে তিনটি খাদ্য আছে ভিটামিন, লবন ও পানি- ওগুলোতে কি শক্তি নেই। যেমন আমরা শুনে থাকি- ভিটামিন খেলে শক্তি বাড়বে। আসলে ভিটামিন, লবন ও পানি ক্যালরিযুক্ত খাবার নয়, বা এগুলো থেকে আমরা সরাসরি শক্তি বা ক্যালরি বা এনার্জি পাইনা। এগুলো বিভিন্নভাবে দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জৈবিক কার্যাবলি সম্পন্ন করে দেহকে পরোক্ষভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে।
ভিটামিন কত ধরনের হয়?
অনেক ধরনের ভিটামিন আছে। যেমন ভিটামিন A, B, C, D, E, এবং K। ভিটামিন B এর আছে ৮ টি ভাগ; ভিটামিন B1, B2, B3, B5, B6, B7, B9 এবং B12। েদহের মধ্যে এগুলোর প্রত্যেকটিরই আছে আলাদা আলাদা ভূমিকা। এগুলোর অভাবে দেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিও সৃষ্টি হয়। এখানে একটি কমন প্রশ্ন আসে-
এত যে ভিটামিন আছে, এগুলোর নামও তো আমরা জানিনা আর সচেতনভাবে খাচ্ছিও তো না। তাহলে দেহে এগুলোর অভাব পূরণ হচ্ছে কিভাবে? আর, কিভাবে এগুলোর অভাবজনিত রোগ থেকে বেঁচে থাকছি?
এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমরা এগুলোর নাম না জানলেও বা সচেতন না থাকলেও এগুলো কিন্ত খাচ্ছি। প্রধানত শাকসব্জির থেকে, ফলমূল থেকে এবং বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে। যারা নিয়মিত সব ধরনের সিজনাল শাকসব্জি ও ফল খান, তাদের কিন্তু কোন রকম ভিটামিনের অভাব হওয়ার কথা নয়।
এবার আমরা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের তালিকাটা একনজরে দেখে শিখে নিই-
➤ ভিটামিন এ (Vitamin A)
কিসে পাওয়া যায়: সবুজ শাকসব্জি, টমাটো, গাজর, পাকা আম, পাকা পেঁপে ইত্যাদি। এছাড়া দুধ, মাখন, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
কি উপকার হয়: দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন করে, চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখে, ত্বক মসৃন রাখে।
অভাবে কি হয়: রাতকানা রোগ হয়, দেহ খসখসে হয়ে যায়।
➤ ভিটামিন বি (Vitamin B)
ভিটামিন বি (Vitamin B) ৮ ধরনের; ভিটামিন B1, B2, B3, B5, B6, B7, B9 এবং B12। এগুলোকে একত্রিতভাবে বলা হয় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (Vitamin B Complex)। আমরা এখানে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সকেই ফোকাস করছি।
কিসে পাওয়া যায়: ঢেঁকিছাটা চাল, গম, কলিজা, দুধ, ডিম, মাংস, অঙ্কুরিত ছোলা, সবুজ শাকসব্জি, পাকা কলা, পেয়ারা ইত্যাদি।
কি উপকার হয়: ত্বক, চুল ও নখকে সুস্থ রাখে, ইমিউনি সিস্টেম গঠনে সহায়তা করে, স্নায়ু গঠনে সহায়তা করে, লোহিত রক্ত কনিকা তৈরি করে, হযম প্রক্রিয়া নিরন্ত্রন করে ইত্যাদি।
অভাবে কি হয়: বেরিবেরি রোগ হয়। ঠোঁট ও জিহ্বায় ফাটল, ঘা বা ফুলে যাওয়ার মত রোগ হয়। এছাড়া চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি, দুর্বলতা, ক্লান্তি, রক্তস্বল্পতা ইত্যাদির মত সমস্যার সৃষ্টি হয়।
➤ ভিটামিন সি (Vitamin C)
কিসে পাওয়া যায়: ভিটামিন C-এর উৎস : পেয়ারা, বাতাবি লেবু, কামরাঙা, কমলা, আমড়া, বাঁধাকপি, আমলকী, লেবু, পেয়ারা, আনারস, কাঁচামরিচ, তাজা শাকসবজি, টম্যাটো ইত্যাদি।
কি উপকার হয়: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখে, লোহিত রক্ত কনিকা গঠনে সহায়তা করে।
অভাবে কি হয়: স্কার্ভি রোগ হয়, রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরনের মত সমস্যা দেখা দেয়।
➤ ভিটামিন ডি (Vitamin D)
কিসে পাওয়া যায়: দুধ, ডিম, কলিজা বা যকৃৎ, দুগ্ধজাত দ্রব্য, তৈলাক্ত মাছ, সামুদ্রিক মাছ, পনির, মাশরুম ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘ডি’ থাকে। সূর্যের আলো গায়ে লাগলে কোলেস্টেরল সহযোগে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়।
কি উপকার হয়: অস্থি গঠনে সহায়তা করে, ইমিউনি সিস্টেক বিল্ড করে, টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে সাহায্য করে, দেহে তারুণ্য আনে।
অভাবে কি হয়: হাড় দুর্বল হয়, শিশুদের রিকেটস্ রোগ হয়, চুল পড়ে যায়, হাড়ে ব্যাথা হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, নারভাস ফাংশন দুর্বল হয়, ডিপ্রেশন, ক্লান্তি, হতাশা ভর করে।
➤ ভিটামিন ই (Vitamin E)
কিসে পাওয়া যায়: দুধ, ডিম , মাছ, মাংস, লেটুস শাক, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
কি উপকার হয়: বন্ধ্যাত্ব রোধ করে, স্তনদুগ্ধের ক্ষরণ ঘটায়।
অভাবে কি হয়: বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়, স্তনদুগ্ধ কমে যায়, ভ্রূনের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
➤ ভিটামিন কে (Vitamin K)
কিসে পাওয়া যায়: সবুজ শাকসব্জি, পালংশাক, টম্যাটো, বাঁধাকপি, দুধ, মাখন, যকৃত ইত্যাদি।
কি উপকার হয়: রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে, ATP উৎপাদনে সাহায্য করে।
অভাবে কি হয়: কেটে গেলে সহজে রক্ত জমাট বাঁধেনা, মাইটোকন্ড্রিয়ায় শক্তি উৎপাদন ব্যাহত হয়।
এগুলোর বাইরেও আরো কিছু খাদ্য উপাদান আছে, যা স্বাস্থ্য সচেতন সকলেরই জেনে রাখা প্রয়োজন।
ফ্যাটি এসিড ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড (Fatty acid & Omega 3 Fatty acid)
আমরা যে চর্বি খাই, সেটাতো সরাসরি রক্তে যেতে পারেনা। হযমের সময় আমাদের দেহ চর্বিকে ফ্যাটি এসিড আকারে ভেঙ্গে দেয় এবং এভাবে রক্তে শোষিত হয়। ফ্যাটি এসিডের অণুগুলো একত্রিত হয়ে ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি করে।
ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ে আমাদের নিচের লেখাটিও পড়ুন-
পড়ুন: প্রশান্তির জন্য শিখিঃ চর্বি, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড- কোনটি কি?
ফ্যাটি এসিড বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দেহের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড হল- ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড (Omega 3 Fatty Acid)।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড (Omega 3 Fatty Acid) সম্পর্কে ডাঃ মনিরুজ্জামান এর একটি চমৎকার বিশ্লেষনমূলক ও তথ্যবহুল ভিডিও আছে। আমারা তার বক্তব্য থেকেই এখানে রিপ্রেজেন্ট করছি।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড হল দেহের ইঞ্জিল অয়েল, যা হার্টের পরম বন্ধু। ইঞ্জিন অয়েল ছাড়া যেমন একটি ইঞ্জিন মসৃনভাবে চলতে পারেনা, তেমনি কোষ বা সেলের ভিতরের প্রতিটি ইঞ্জিনের কাজ সূচারুরূপে সম্পন্ন করে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। ওমেগা ৩ হল সবচেয়ে এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড। ডাঃ মনিরুজ্জামানের মতে, ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড বেশ গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতে রয়েছে।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের কাজ
- হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
- ভাল কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বাড়ায় এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমায়।
- রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমায়।
- ম্যাটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি কমায়।
- চোখের সুস্থতা বাড়ায়।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
- ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করে।
- হাড় ক্ষয় রোধ করে।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড কিসে পাওয়া যায়
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল, তিসি, চিয়া সিড, আখরোট, চিনাবাদাম, সয়াবিন, পালংশাক, দুধ, পনির ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।
এন্টিঅক্সিডেন্ট (Anti-oxidant)
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল এক ধরনের খাদ্য উপাদান, যা ভিটামিন এ, সি এবং ই এরই মত এবং যা ফ্রি রেডিক্যাল থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। বিজ্ঞানের ভাষায় রেডিক্যাল (Radical) বা মুলক হল এক প্রকার উচ্চতর সক্রিয় অণু যা শরীরে স্বাধীনভাবে ঘুরাফেরা করে। এই মুক্ত অণু শরীরের কোষকলার ধ্বংস সাধন করে বলে শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এন্টিঅক্সিডেন্ট (Anti-oxidant) সেই ক্ষতি থেকে আমদেরকে রক্ষা করে।
কি উপকার করে: এন্টিঅক্সিডেন্ট এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল, এটা আমাদের দেহে বয়সের ছাপ পড়তে দেয়না। এন্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিক্যালের কারনে আমাদের শরীরে যে সকল ব্যাধি ও জটিলতা দেখা দেয়, সেগুলোকে প্রতিরোধ করে; যেমন-
- ক্যান্সার
- ডায়াবেটিস
- পারকিনসন’স ডিজিজ
- এলজাইমার’স ডিজিস
- চেহারায় বয়সের ছাপ
- ইনফ্লামেশন
- হাইপারটেনশন
- রক্তের শিরা উপশিরা শক্ত হয়ে যাওয়া
কিসে পাওয়া যায়: সবুজ শাকসব্জি, দুধ, ডিম, সজনে ডাটা, কলিজা, বাদাম, সিম ও সিমের বীজ, বরবটি, মিষ্টি আলু, করমচা, কালোজাম, বরই, লটকন, ডালিম, স্ট্রবেরি, আঙ্গুর ইত্যাদি।
আঁশযুক্ত খাবার (Food with Fibre)
ফাইবার বা আঁশ কথাটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সোনালি আঁশ পাটকে তো আমরা সবাই চিনি। তাহলে ফাইবারযুক্ত খাবার কি? আমারা খাবার খেলে সেটা পেটে বা পাকস্থলীতে গিয়ে হযম হয় এবং খাদ্যরস পাকস্থলী দেয়াল দিয়ে শোষিত হয়ে রক্তে মিশে যায় আর অপাচ্য অংশ দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ফাইবারযুক্ত খাবার হলো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় সেই সমস্ত খাবার যা আমরা হজম করতে পারিনা। এগুলো পরিপাক ছাড়াই বৃহদান্ত্রের দিকে চলে যায়। পরিপাক না হলেও এটা শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী। কষা পায়খানার সমস্যা দূর করে পেট পরিস্কার রাখতে এবং আরো নানা কারনে আমাদেরকে ফাইবারযুক্ত খাবার খেতে হবে।
কি উপকার করে: কষা পায়খানা দূর করে, পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সার দূর করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে কাজে লাগে, শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে ওজন কমাতে সাহায্য করে, কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ইত্যাদি।
কিসে পাওয়া যায়: উটস্, মটরশুঁটি, তিষির বীজ, আপেল, ব্রকলি, মসুর ডাল, পাকা কলা, নাশপতি, ছোলা, চিয়া সীড ইত্যাদি। সবচেয়ে বেশি ফাইবার পাওয়া যায় চিয়া সীড এ।