ব্যায়াম করতে ভাল লাগেনা- ব্যায়াম কেন করব? ব্যায়ামের বিকল্প কি?

সুপ্রিয় দর্শনার্থী- আসসালামু আলাইকুম,

প্রশান্তি ডট কম এ আপনাকে স্বাগতম।

আপনি কি ব্যায়াম করেন? হয়ত করেন, জীমে যান- হয়ত করেননা। না করলেও হয়ত এর স্বপক্ষে আপনার যুক্তি আছে। আছে তৃতীয় হাত বা অজুহাত। কিন্তু ব্যায়াম আপনার করা উচিত। সুস্থতার জন্য, জীবনের জন্য, প্রশান্তির জন্য।

বন্ধুরা, স্পষ্টতঃই এখানে আমরা শারীরিক ব্যায়াম (Physical exercise) এর কথাই বলছি। এছাড়াও আছে মানসিক ব্যায়াম, মেডিটেশন, ইয়োগা, যোগব্যায়াম ইত্যাদি। আমাদের এই প্লাটফরম (প্রশান্তি ডট কম) এ আপনারা সবই পাবেন। কোনটা করতে হবে, কেন, কতটুকু, কীভাবে- সবই। এর সাথে আবশ্যিকভাবে জড়িত ধর্মীয় বিষয়গুলোও clarify করা হবে।

আপনারা নিশ্চয় জানেন, প্রশান্তি ডট কম আপনার শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তির Commitment নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির তথ্য সরবরাহই শুধু আমাদের কাজ নয়, আমাদের মিশন- আমরা যা বলছি, তা আপনার জীবনে ঘটিয়ে তোলা। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন

কিন্তু ব্যায়াম করতে কি আপনার ভালো লাগেনা? যদি না লাগে এ দোষ আপনার নয়। সভ্যতার পরিক্রমায় এই যুগে এসে আমরা সমস্যার সমাধান হিসাবে শুধু ট্যাবলেটের কথাই ভাবি। আহা! ব্যায়ামের যদি ট্যাবলেট থাকত, কতই না ভালো হত। কিন্তু না, ট্যাবলেট নিজেই কিন্তু একটি রোগ। আমরা বরং ‘ট্যাবলেট মুক্ত জীবন’ এর জন্য প্রাকৃতিক আইনের পথ ধরেই হাঁটব।

যাই হোক, বলে রাখি- ব্যায়াম করতে না চাওয়াও কিন্তু একটা অসুখ। এর ওষুধ কি? এর অষুধ হল- ব্যায়াম। বুঝলেন তো, ব্যায়াম কতটা জরুরী। ব্যায়াম করতে না চাওয়ার যে অনিহা, জড়তা, নিরুৎসাহ ভাব, অলসতা সেটাও কিন্তু ব্যায়ামের মাধ্যমেই দূর হয়। সুতরাং প্রথমে জোর করেই শুরু করতে হবে ব্যায়াম। আর সর্বাগ্রে ভরসা রাখতে হবে আল্লাহর উপর- “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল“।

যাক, এবার কাজের কথায় আসি।

ব্যায়াম কি?

ব্যায়াম হল, এক কথায়, শরীরের অঙ্গ সঞ্চালন বা নড়াচড়া। অর্থাৎ- হাত, পা, ঘাড়, হাঁটু, কব্জি, কোমর, কনু্‌ই, পিঠ ইত্যাদি নড়াচড়া করলেন- এটাই ব্যায়াম।

ব্যায়ামে কি হয়?

এতে দেহটা সচল থাকে। দেহে জং বা মরিচা পড়েন। দেহের রক্ত চলাচল, বিপাকীয় কাজ, নার্ভাস সিস্টেম, হার্টের কাজ, ব্রেইন ফাংশন, হযম প্রক্রিয়া ও অন্যান্য সমস্ত ক্রিয়াকান্ড স্বাভাবিক গতিতে চলে, সুস্থভাবে বেঁচে থাকা যায়, অনেক জটিল রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

এটাকে এভাবে তুলনা করা যায়- একটা ধারালো ছুরিকে ব্যবহার না করে রেখে দিলে তা কিছুদিন পরে মরিচা পড়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।কিন্তু একে চালু রাখলে বা নিয়মিত ব্যবহার করতে থাকলে সেটা হবেনা।

আবার একটি নদীতে যদি স্রোত না থাকে তাহলে সেটা অল্প সময়েই আগাছা ও শ্যাওলায় পরিপূর্ণ হয়ে স্থবির ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে।

হার্টের পাম্পের ফলে ধমনী ও শিরা দিয়ে রক্ত আসা যাওয়া অর্থাৎ চলাচল করে। এই যে বিরামহীন রক্ত প্রবাহ, সেটাকে নদীর স্রোতের মত স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহমান রাখতে এবং সমস্ত সিস্টেম ও ধারাগুলোকে সচল ও কর্মক্ষম রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নাই। নাই, নাই এবং নাই। কোরআনে আছে (সুরা বালাদ, আয়াত ৪)-

“আমি মানুষকে শ্রম নির্ভর করে সৃষ্টি করেছি”

কিন্তু আমরা তো পরিশ্রম করছি না। প্রতিটি মানুষকে পরিশ্রম করে, সংগ্রামের মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে বেঁচে থাকার প্রাকৃতিক Culture টি যদি পৃথিবীতে থাকত, তাহলে কি ব্যায়ামের প্রয়োজন হত? বরং সেই সময়ের মানুষ বর্তমানের চেয়ে আরো দীর্ঘ আয়ু পেত।বর্তমান পৃথিবীর Lifestyle জনিত মারনব্যাধি- হার্ট অ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক, রক্ত নালির ব্লক, কিডনি জটিলতা, ক্যান্সার, টিউমার ইত্যাদি তখন ছিলনা। মানুষের ভোগনির্ভর ইচ্ছাশক্তির বিষাক্ত ছোবলে নীল হয়ে গেছে খোদার দেওয়া পৃথিবী।

প্রিয় পাঠক, এর বিপরীতে সভ্যতার পক্ষে তর্ক করার মত যে কিছু নেই, তা আমি বলছিনা। আমরা শুধু ব্যায়াম সংশ্লিষ্ট কিছু বাস্তবতাই এখানে তুলে ধরেছি।

প্রশ্নঃ তাহলে ব্যায়াম শিখব কেন? আমি কি নিজেই ঠিক করে নিতে পারিনা কিভাবে নড়াচড়া বা ব্যায়াম করব?

উত্তরঃ হ্যাঁ, আপনি তা পারেন, যদি আপনি সত্যিই দরকারি অঙ্গ আর পয়েন্টগুলোকে নড়াতে পারেন। কিন্তু ব্যাপক দক্ষতা, জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা ছাড়া আপনি কি তা পারবেন বলে মনে করেন? যুগ যুগ, শত সহস্র বৎসর ধরে মানুষ ব্যায়াম করতে করতে দেহের সবচেয়ে গোপনীয় এবং বেকায়দায় থাকা পয়েন্টগুলোতেও যেভাবে ব্যায়ামের নড়াচড়া পৌঁছাতে পেরেছে, তা কি আপনার মিস হয়ে যাবে বলে মনে করছেননা?

তার চেয়ে সহস্র বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষ ব্যায়ামের যে কৌশলগুলো হাতে পেয়েছে সেগুলো গ্রহণ করে নেওয়াই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?

হ্যাঁ, তবে ফ্রিহ্যান্ড ব্যায়াম এবংস্বাভাবিকভাবে দৃশ্যমান অঙ্গের ব্যায়াম আপনি নিজের ইচ্ছামত ও করতে পারেন।

প্রশ্নঃ শারীরিক ব্যায়ামে কি কি উপকার পাওয়া যায়?

শারীরিক ব্যায়ামের উপকারিতা

উত্তরঃ ব্যায়ামে তিন ধরনের উপকার হয়-

১) শারীরিক উপকার ২) শারীরবৃত্তীয় উপকার ৩) মানসিক উপকার

.

শারীরিক উপকার

  • পেশীকে গঠন করে ও শক্তিশালী করে।
  • হাড়কে শক্তিশালী করে।
  • হাড়কে জয়েন্টকে নমণীয় (Flexible) করে সচল রাখে।
  • হৃৎপিণ্ডের পেশী শক্তিশালী করে
  • মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে কর্মক্ষম রাখে, মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটায়।
  • শরীরকে করে শক্তিশালী।
  • শরীরের নমনীয়তা বাড়ায়।

শারীরবৃত্তীয় উপকার

  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
  • হৃদরোগের ঝুকি কমায়
  • ডায়াবেটিসের ঝুকি কমায়
  • রক্তে চর্বির পরিমান কমায়।
  • রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে।
  • মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে।
  • হযম শক্তি বৃদ্ধি করে পেটের স্বাস্থ্যকে ভাল রাখে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • ঘুমের মান উন্নত করে।
  • সহনশীলতা বাড়ায়।
  • যৌন স্বাস্থ্যেকে উন্নত করে।
  • ওজন হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
  • ক্ষুধা বাড়ে, ফলে খাবারের অনিয়ম দূর হয়।

মানসিক উপকার

  • মনকে প্রফুল্ল রাখে।
  • উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, মানসিক চাপ (স্ট্রেস) দূর করে।
  • ডিপ্রেশন দূর করে।
  • দুর্বলতা-ক্লান্তি দূর করে।
  • কাজে উদ্দীপনা বাড়ায়।

ভাল করে লক্ষ্য করুন বন্ধুরা, ব্যায়াম এতগুলি benefit দেয়, কিন্তু এর কোন একটি সমস্যা আপনার মধ্যে প্রবল হয়ে উঠলে তা আপনার জীবনকে ভয়াবহ দুর্বিসহ অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিতে পারে।আপনার আশেপাশের ভুক্তভোগির দিকে তাকালেই তা সহজে বুঝতে পারবেন।

প্রশ্নঃ ব্যায়ামের বিকল্প কিছু আছে কি? ব্যায়াম না করে অন্য কি উপায়ে ব্যায়ামের benefit গুলো পাওয়া যাবে।

শারীরিক ব্যায়ামের বিকল্প

উত্তরঃ ব্যায়াম ছাড়া অন্য কোনভাবেই ব্যায়ামের পূর্ণাঙ্গ benefit পাওয়া যাবেনা। ব্যায়ামের বিকল্প হতে পারে হাঁটা, দৌড়ানো, খেলাধুলা, সাঁতার কাটা, সাইক্লিং, জগিং, শারীরিক পরিশ্রমের কাজ ইত্যাদি। এগুলোর আলাদা আলাদা উপকারিতা আছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু কোনটাই ব্যায়ামের সবগুলি সুফল এনে দেবেনা।

প্রকৃতপক্ষে, ব্যায়ামের সময় শরীরের নির্দিষ্ট এবং সম্ভাব্য অঙ্গ এবং পয়েন্টগুলোকে Target করে ব্যায়াম করা হয় যার মাধ্যমে ঐ অঙ্গগুলোর সঞ্চালন, বৃদ্ধি ও বিকাশ সাধিত হয়। এটা অন্য মাধ্যম ব্যবহার করে পুরোপুরি পাওয়া যাবেনা।

তার মানে এই নয় যে অন্য বিকল্পগুলো করা যাবেনা বা লাগবেনা। ওগুলো ও Exercise। প্রত্যেকেই তার প্রবনতা, সামর্থ্য ও সুযোগ-সুবিধা অনুসারে উপরোক্ত ব্যায়ামগুলো করবে, আবার নিয়মতান্ত্রিক ব্যায়াম ও করবে। যেমন- প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবি শেঠি হৃদপিন্ড ভাল রাখতে অন্যান্য পরামর্শের পাশাপাশি সপ্তাহে ৫ দিন আধা ঘন্টা করে হাঁটতে বলেছেন।

প্রশ্নঃ ব্যায়াম করতে ভাল লাগেনা কেন বা ব্যায়ামের প্রতি গড়হারে মানুষের অনিহা কেন?

উত্তরঃ স্বাভাবিকভাবে বা গড়হারে মানুষের জীবনটা হল পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে পড়া একটি পাথরের মত। বা, স্রোতে ভেসে চলা কচুরিপানার মত। মানুষ সাধারণত স্রোত যেদিকে চলে সেদিকেই চলতে চায়।মানুষ শুধু সেই পথেই চলতে চায়, যে পথে চললে কোন প্রচেষ্টা, কষ্ট-পরিশ্রম, সাবধানতা এবং মাথা খাটানোর প্রয়োজন হয়না। অর্থাৎ এক কথায়, পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পাথরের মত পতনশীল মন তাকে যেদিকে নিয়ে যায়, সে সেদিকেই চলে। আর মনের খেয়াল-খুশিকে অনুসরন করে চলা মানেই কিন্তু পাপের পথ। কোরআনে আছে (সুরাঃ আল জাসিয়া, আয়াতঃ২৩)-

“তবে কি আপনি লক্ষ্য করেছেন তাকে, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজ ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে?”

যাই হোক, ব্যায়াম করতে গেলেও কিন্তু কষ্ট, পরিশ্রম, ধৈর্য, সময়, মনো্যোগ এসবের প্রয়োজন। এসব কিছু provide করার চেয়ে বরং না করার আনন্দটাই অনেকের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। ফলে ব্যায়াম করতে ভাল লাগেনা। ভবিষ্যতে সুস্থ থাকার চেতনা কাজ না করলে ব্যায়ামে অনিহা আসবেই। উল্লেখ্য, ব্যায়ামের শুরুটা কিছুটা কষ্টকর মনে হলেও ব্যায়াম চালু হয়ে গেলে কিন্তু আনন্দদায়কই মনে হয় । অনেকে ব্যায়ামে আসক্তও হয়ে পড়ে

প্রশ্নঃ ব্যায়ামের প্রতি বিতৃষ্ণা, অনিহা, অলসতা, জড়তা, অজুহাত কাটিয়ে কিভাবে ব্যায়াম শুরু করা যায়?

উত্তরঃ সবার আগে জানতে হবে ব্যায়াম কিভাবে আপনার উপকার করে। কিভাবে আপনাকে ভয়াবহ রোগ থেকে বাঁচায়। তার চেয়েও বেশি কাজ দেবে, যদি আপনি আপনার আশেপাশে তাকিয়ে দেখেন কিভাবে মানুষেরা মরনঘাতি রোগে কষ্ট পাচ্ছে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এবং নিয়মকানুন মেনে চললে যে রোগগুলো এড়ানো যেত, যেমন- স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফ্যাটি লিভার, বাত-ব্যাথা, হার্ট-ব্লকেজ, হাড় ক্ষয়, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা-ক্লান্তি, ডিপ্রেশন ইত্যাদি।

সুতরাং, সিদ্ধান্ত আপনার- আপনি আপনার বর্তমান এবং ভবিষ্যত জীবনটা কেমন দেখতে চান।সুস্থতার চেয়ে বড় নিয়ামত কি কোন কালে ছিল, আছে বা থাকবে?

হাদিসে বলা হয়েছে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে গুরুত্ব দিতে, বার্ধকের আগে যৌবনকে গুরুত্ব দিতে। এই গুরুত্বটা আপনি কিভাবে দিবেন, কখন দিবেন? নিশ্চয় এই মূহুর্তেই। আপনার বর্তমান মূহুর্তের সাবধানতাই ভবিষ্যতের সঞ্চয়। আপনি কি ভবিষ্যতের বিপদ এড়াতে এই মূহুর্তে টাকা সঞ্চয় করছেননা? আপনার বর্তমানের ব্যায়াম হল বর্তমান এবং ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যগত সম্পদ

এই mindset কে গ্রহন করলে কি ব্যায়ামে অনিহা, অলসতা, জড়তে থাকবে? থাকবেনা। সর্বোপরি, দীর্ঘদিন ধরে আপনার মনের উপর চেপে থাকা অবৈধ অভ্যাসের প্যাটার্নকে চ্যালেঞ্জ করে জোরপূর্বক শুরু করুন ব্যায়াম এবং আজই।ব্যর্থ হবেননা ইনশাল্লাহ। দেখবেন ক্রমে ক্রমে ব্যায়ামের মজা পেয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।

খোদা হাফেজ।

.

মন্তব্য করুন