কে এই ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির?
ডাক্তারি পেশায় বাংলাদেশি ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবিরকে বলা যায় বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশে বসে তিনি মেডিকেল চিকিৎসায় এক যুগান্তকারী ধারনা প্রবর্তন করেছেন। তার চিকিৎসা ব্যবস্থা হল- জীবন-যাপন পদ্ধতির পরিবর্তন (Lifestyle Modification) এর মাধ্যমে ওষুধবিহীনভাবে রোগীর সুস্থতা ফিরিয়ে আনা এবং আজীবন সুস্থ থাকার ব্যবস্থা করা। ‘লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা করা’– এ ধারনাটি নতুন নয়। পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে হাতে গোনা কিছু ডাক্তার ইতোমধ্যেই এ পদ্ধতির চিকিৎসা শুরু করে দিয়েছেন।
কিন্তু Lifestyle Modifier ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের চিকিৎসায় আছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য, সম্পূর্ণ আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি, নিজস্ব নীতি-আদর্শ (Ideology)। যার কারনে তার লক্ষ লক্ষ অনুসারী তার প্রবর্তিত জে.কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) অনুসরণ করার মাধ্যমে রোগমুক্ত হচ্ছেন ও সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছেন। বহিঃবিশ্ব থেকেও শত শত রোগী তার কাছে আসছেন এবং সুস্থ জীবনধারায় ফিরে আসছেন।
তিনি রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি সার্বিক সুস্থ-সুখি ভবিষ্যৎ জীবন-যাপনের রূপরেখা ও ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। দৈহিক সুস্থতার সাথে অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছেন মানসিক ও আত্মিক সুস্থতার বিষয়কেও। এবং এসব কিছুই করছেন কোরাআন ও হাদিসের আদেশ-নির্দেশের সীমারেখার ভিতরে।
এর জন্য তিনি সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করেন। মহাহ সৃষ্টিকর্তা আমাদের এ দেহটাকে যে বৈশিষ্ট্য, স্বভাব ও চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আধুনিক সভ্যতার প্রবল ঘূর্ণিপাকে পড়ে আমরা তা বেমালুম ভুলে গেছি। আমরা এখন তাই খাচ্ছি, শত মাইল দূর থেকেই দেহ যাকে ‘না’ বলছে। আমাদের স্বভাব ও ভোগ প্রবণতার প্রবল অত্যাচারে দেহের কোষে কোষে ঘুনে ধরেছে। সুস্থ থাকা হয়ে উঠেছে দুঃস্বপ্ন।
এ থেকে মানুষকে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে তার সুস্থতার অন্যতম মূলনীতি হল- প্রাকৃতিক খাবার খাওয়া, প্রাকৃতিকভাবে চলা অর্থাৎ সবকিছুতে প্রকৃতির নিয়মকে, আল্লাহর বিধানকে মেনে চলা। যেমন- ফার্মের মুরগি খাওয়া নয়, ফার্মে পালন করা দেশি মুরগিও নয়; গ্রামের মুক্ত পরিবেশে দেশিয় যে মুরগি স্বাধীনভাবে হাঁটা চলা করে- ব্যায়াম হয়, স্বাধীনভাবে খাবার খায়, রৌদ্রে যায়, তেমন মুরগি খেতে হবে। এটা একটা উদাহরন মাত্র।
যাই হোক, ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির সম্পর্কে আমি আর একটি পোস্টে বিস্তারিত বলেছি, সময় থাকলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে দেখে নিন। এই প্রেজেন্টেশনে আমরা ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের জে.কে. লাইফস্টাইলটি সুস্পষ্টভাবে বুঝার চেষ্টা করব।
লিঙ্ক: রোগির আত্বীয় ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির ও একটি স্বাস্থ্য বিপ্লবের গল্প
ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle)
জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) বা জাহাঙ্গীর কবির লাইফস্টাইলটা হল আসলে একটা প্রাকৃতিক জীবনযাপন পদ্ধতি। এখানে একক কোন রোগকে টার্গেট করে লাইফস্টাইল অনুসরন করতে বলা হয়না। এক কথায়, সামগ্রিক সুস্থতা আর এর জন্য সামগ্রিক জীবনযাপন পদ্ধতি। জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) রোগের উৎসমূলে হাত দেয় এবং প্রাকৃতিক ও অর্গানিক খাবার, ব্যায়াম, পারফেক্ট ঘুম, শ্বাসের ব্যায়াম, ইমিউনিটি বৃদ্ধি, ডিটক্সিফিকাশন, Gut cleaning (অন্ত্র পরিষ্কার), অভ্যাসের পরিবর্তন এবং আরো বেশ কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে ওষুধবিহীনভাবে রোগকে একেবারে গোড়া থেকে নির্মূল করে দেয়। এতে বিদ্যমান রোগ নিরাময় হয় এবং ভবিষ্যতে রোগ-ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার একটা স্ট্রাকচার দেহে তৈরি হয়ে যায়।
বলতে গেলে কোন একক রোগকে আলাদাভাবে চিকিৎসা করা সম্ভবও না। কারন একটি রোগ একক কোন কারনে হয়না। এর সাথে অনেকগুলো শারীরিক ও মানসিক সমস্যা, জটিলতা ও বিশৃংখলা জড়িত থাকে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে-
প্রশ্নঃ ডাক্তাররা কিভাবে আলাদাভাবে একটি রোগের চিকিৎসা করেন?
উত্তরঃ চমৎকার প্রশ্ন। ডাক্তাররা তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধু signs and symptoms বা লক্ষন-উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করেন। কখনে কখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগের কারনকে চিকিৎসা করেন। কিন্তু রোগের একেবারে মূল কারনে হাত দেননা।
জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) এর Ideology বা মূলমন্ত্র এখানেই- রোগের গোড়া কেটে দেওয়া। কিন্তু আমাদের সার্বিক সুস্থতা মানে কিন্তু শুধু দেহের সুস্থতা নয়। এর সাথে মন, এমনকি আত্মাও জড়িত।
অর্থাৎ- Soundness means soundness of body, mind and soul। জে. কে. লাইফস্টাইল এ দেহের সাথে মন এবং আত্মাকেও অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়া হয়েছে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া, শ্বাসের ব্যায়াম ও ইয়োগা করা, আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল করা, কথায় ও কাজে সর্বদা সৎ থাকা, কল্যান কাজ করা, রোজা রাখা, অতিরিক্ত নফল নামায পড়া, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ইত্যাদি জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) এর আবশ্যকীয় অঙ্গ।
প্রশ্নঃ জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) অনুসরন করলে কি সব রোগের ঝুঁকি থেক নিরাপদ থাকা যাবে?
উত্তরঃ আসলে তিনি টার্গেট (Target) করেন লাইফস্টাইল (Lifestyle) জনিত রোগগুলোকে যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে বহু রোগের জননী ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসের কারনে প্রায় ৬০-৭০ টি মরনঘাতি রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। এরকম কিছু রোগ হল- স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, নিম্ন রক্তচাপ, হার্টের দুর্বলতা, হার্ট ব্লক, হার্ট এ্যাটাক, ব্রেইন স্ট্রোক, রক্তনালির ব্লক, প্যারালাইসিস, বাত ব্যাথা, লিভার সিরোসিস, ফ্যাটি লিভার, কিডনি ড্যামেজ, কিডনি ফেইলিওর, ক্যান্সার, মাথা ঘুরানো, চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
আর জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) যেহেতু রোগ সৃষ্টির মূল কারনকে হিট করেন, সে কারনে এর মাধ্যমে ইমিউনিটি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বিল্ড-আপ ও ডেভেলাপ হয়ে যায়। এছাড়া দেহকে প্রদাহমুক্ত (Inflamation-free), বিষমুক্ত (Detoxified), খারাপ ব্যাকটেরিয়া মুক্ত (Bacteria free) করা হয়। ফলে জীবণুঘটিত রোগের ঝুঁকিও কমে যায়। বা জীবাণুঘটিত রোগ (টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, হেপাটাইটিস, রুবেলা, করোনা ভাইরাস, মাম্পস ইত্যাদি) থেকেও সহজে survive করা যায়।
জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) এর মূল কাঠমো
নিচের নিয়মকানুনগুলো সঠিকভাবে মেনে চলাই এক কথায় জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle)। কিন্তু এই নিয়মগুলো মানার পূর্বশর্ত হল- এগুলো সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা অর্থাৎ জ্ঞান অর্জন করা। কিন্তু জানলেই হবেনা, সঠিকভাবে মানতে হবে। জানার চেয়ে মানা বেশি কঠিন।
ইউটিউবে জাহাঙ্গীর কবির স্যারের প্রায় দেড় হাজারের উপরে ভিডিও আছে। এগুলোর মাধ্যমে তিনি এই ম্যাসেজ এবং তাগাদাই চিচ্ছেন বার বার। অর্থাৎ জানতে হবে এবং জেনে মানতে হবে। যাই হোক, সবার জন্য একসাথে সবগুলো নিয়ম মানা সত্যিই অত্যন্ত কঠিন কাজ। জে. কে. লাইফস্টাইল এর ফলোয়াররা এগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পালন করতে পারেন। যার জন্য যেটা আগে সুবিধা। আবার এর সাথে আর্থিক ব্যাপারও জড়িত, সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। সর্বোপরি আপনার লক্ষ থাকবে, ধীরে ধীরে সবকিছু মেনে চলার দিকে এগিয়ে যাওয়া।
ইউটিউবের এত ভিডিও (প্রতিটি ২-৩ ঘন্টার) থেকে সঠিক তথ্য নেওয়াটা সত্যিই কঠিন। তবে চ্যানেলে ক্যাটাগরিওয়াইজ ভিডিও ও আছে। যেখান থেকে নির্দিষ্ট বিষয়ের ভিডিওটি (যেমন- গ্যাস্ট্রিক, ফ্যাটি লিভার) দেখে নিতে পারবেন।
চলুন এবার দেখে নিই, জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) এর মূলকাঠামোগুলো- সংক্ষেপে সহজ ভাষায়।
সুস্থ খাবার খাওয়া
জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) এর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল- সুস্থ খাবার পাওয়া ও খাওয়া। কারন- একুরিয়ামের মাছ যেমন একটা কাঁচের ঘরের মধ্যে বড় হয়, আমরাও তেমনি এই পৃথিবীতে একটি বিষের কাঁচের আবরনের মধ্যে জন্ম নিচ্ছি, বেড়ে উঠছি, লালিত পালিত হচ্ছি এবং মারা যাচ্ছি।
কোথায় নেই বিষ- পানিতে, বাতাসে, খাবারে, ফলে, সব্জিতে, মাছে, মাংসে, ওষুধে- সর্বত্রই বিষের ছড়াছড়ি। আপনাকে যদি ৫০ বছর সময় দেওয়া হয়- যে এই বিষের একুরিয়াম থেকে বের হয়ে যান, আপনি সফল হবেননা। আপনি কি মঙ্গল গ্রহে গিয়ে বসবাস করতে পারবেন।
উন্নত বিশ্ব সহ সর্বত্রই মানুষ খাচ্ছে কেমিক্যাল- ফরমালিন, কার্বাইড সহ ভয়ানক ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশানো খাবার, সার ও কীটনাশক দেওয়া সব্জি, ফল, শস্য। হরমোন ও এণ্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেওয়া হাস-মুরগি-গরুর মাংস। যত্রতত্র খাচ্ছে হাইব্রিড খাবার যার ধকল আল্লাহর দেওয়া এই দেহটা বহন করতে পারছেনা। পরিনতিতে আক্রান্ত হচ্ছে মরনঘাতি রোগ (Deadliest disease) এ।
এত শত সহস্র হতাশা থাকা সত্ত্বেও, আপনি সুস্থ খাবার খেতে পারেন, সংগ্রহ করতে পারেন, যদি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেন। বা বিষাক্ত খাবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরের মূলনীতি আপনাকে সুস্থ খাবারই খেতে হবে, টক্সিক খাবার নয়। উপরে উল্লেখিত দূষিত-বিষাক্ত খাবার বাদ দিতে হবে। প্রাকৃতিক খাবার, বিশুদ্ধ খাবার প্রয়োজনে গ্রামের পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। সম্ভব হলে নিজে চাষ করে (যেমন- মুরগি, মাছ, সব্জি ইত্যাদি) খেতে হবে। খাদ্যের ঘাটতি পূরণে ইমপোর্ট করা অর্গানিক ফুড যথাসম্ভব খাওয়া যেতে পারে।
অটোফেজি/রোজা রাখা/ফাস্টিং করা
রোজা রাখা বা ফাস্টিং করা বা না খেয়ে থাকা জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) এর আবশ্যকীয় অঙ্গ। রোজা রাখার মাধ্যমে অটোফেজি চালু হয়, দেহের বিষ বা টক্সিন দূর হয়ে ডিটক্সিফাই হয়, দেহের প্রদাহ (Inflamation) দূর হয়, ওজন কমে, রক্তে চিনি কমে, ডায়াবেটিস দূর হয় ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের ‘না খেয়ে থাকা’; যেমন- রোজা রাখা, ফুল/ড্রাই ফাস্টিং, ওয়াটার ফাস্টিং, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, ওয়ান মিল এ ডে ইত্যাদি প্রচলিত আছে জে. কে. লাইফস্টাইল এ। যার যা যতটুকু প্রয়োজন, সেই অনুসারে প্রেস্ক্রাইব করা হয়।
আগে আগে ঘুমিয়ে ভোরে জাগা (Early to bed early to rise)
ঘুমিয়ে পড়ার আদর্শ সময় এশার নামায শেষ করে এবং জেগে উঠার আদর্শ সময় ফজরের সময়। এই টাইম বাউন্ডারির ভিতরে যদি কারো ভাল ঘুম না হয়, সে ঘুমের জটিলতায় আক্রান্ত। সুতরাং জে. কে. লাইফস্টাইল সঠিকভাবে মানতে হলে এই ঘুম-জাগরণ চক্রটা (সার্কাডিয়ান রিদ্ম) ঠিক করতে হবে। বছরের পর বছর ধরে কম ঘুম, ঘুম না হওয়া, হাল্কা ঘুম, দিনে ঘুম, আলো জ্বালিয়ে ঘুম ইত্যাদি মারাত্বক ক্যান্সার সহ অনেক অনেক স্বাস্থ্য জটিলতা ও অসুস্থতার সৃষ্টি করে। সুতরাং ঘুম ঠিক করার জন্য চ্যালঞ্জ নিন। গতানুগতিক নিয়মে চললে ঘুমের ভারসাম্যে ফিরে আসা ৫০ বছরেও সম্ভব হবেনা।
শারীরিক ব্যায়াম
শারীরিক ব্যায়ামের উপকারিতার কথা সবাই জানে এবং প্রায় সবাই এটা এড়িয়ে যায়। ব্যায়াম আপনাকে করতেই হবে। অনেকে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত হাঁটে এবং এটাকেই যথেষ্ট মনে করে। মনে রাখবেন, হাঁটা কোন ব্যায়ামের বিকপ্ল নয়। হাঁটায় কিছুটা উপকার হয়, কিন্তু ব্যায়ামের সব সুফল পাওয়া যায়না।
আল্লাহ মানুষকে শ্রমনির্ভর করে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং ব্যায়াম আপনাকে করতেই হবে। বা কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যায়াম না করলে দেহে মরিচা পড়ে, রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, শরীরের কোষ ও সিস্টেমগুলো সঠিকভাবে ফাংশন করতে পারেনা। নানারকম শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। দেহটা তাড়াতাড়ি বার্ধক্যকে স্বাগত জানায়।
জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) এর একটি অতি আবশ্যকীয় অঙ্গ ব্যায়াম। সকলেরই ব্যায়াম করতে হবে। প্রথমে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ দিয়ে ব্যায়াম শুরু করা যায়। পরে ওয়েট নিয়ে এবং যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যায়াম করতে হবে। সবক্ষেত্রেই শরীরের ল্যাঙ্গুয়েজ বা ভাষা বুঝে ব্যায়াম করতে হবে। শরীরকে শাস্তি দেওয়া যাবেনা। ব্যায়ামে প্রথম প্রথম ব্যাথা হলেও ভাল ঘুম হলে ড্যামেজগুলো রিপেয়ার হয়ে যায় এবং মাসখানেকের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে আসে।
শ্বাসের ব্যায়াম
বলা হয়ে থাকে, শ্বাসের নিয়ন্ত্রন করুন, সমস্ত পৃথিবী আপনার নিয়ন্ত্রনে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বিস্ময়কর সব শারীরিক-মানসিক উপকার করে। তার মধ্যে কয়েকটি হল- অক্সিজেন সরবরাহ উন্নত করে, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে, দেহকে ডিটক্সিফাই করে, দেহকে শিথিল করে, ভাল ঘুমে সহায়তা করে, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দূর করে, স্ট্রেস কমায়, দেহের শক্তিস্তরকে উন্নত করে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি দূর করে দেহকে কর্ম উদ্দীপনায় উজ্জীবিত করে ইত্যাদি।
ইয়োগা
ইয়োগার অনেক উপকারিতা আছে। এটা একই সাথে শারীরিক ও মানসিক এক্সারসাইজ। বিনা ওষুধে ও ব্যবস্থাপনায় প্রাকৃতিকভাবে রোগমুক্তি ও ফিটনেসের একটি চমৎকার পদ্ধতি ইয়োগা।
ইয়োগার মাধ্যমে- পেশি ও বিভিন্ন অঙ্গের শক্তি ও নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়, স্টেস নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়, স্নায়ুবিক উত্তেজনা হ্রাস পেয়ে দেহের শিথিলায়ন হয়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে, হৃদ্রোগ প্রতিরোধ করে, হযম শক্তি বৃদ্ধি করে, ওজন নিয়ন্ত্রন করে, মানসিক স্থিতিশীলতা ও প্রশান্তি বৃদ্ধি করে, মানসিক স্বাস্থ্যর উন্নতি হয় এবং এরকম আরো অনেক বেনিফিট হয়।
গায়ে রৌদ্র লাগানো
গায়ে রৌদ্র লাগালে হয় কল্পনাতীত উপকার, যা মানুষ জানেনা। কোন ডাক্তার কখনো রৌদ্রে যাওয়ার উপকারিতার কথা বলেননা। বাংলাদেশে একমাত্র ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবিরই রৌদ্রে যাওয়ার বিস্ময়কর উপকারিতার কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করেন এবং এই ম্যাকানিজ্ম ব্যবহার করে হাজার হাজার মানুষকে রোগমুক্ত করেন।
ভিটামিন ডি হাড় ও দাঁত শক্ত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি (Immunity) বৃদ্ধি করে, শরীরের প্রদাহ (Inflamation) কমায়, পেশি শক্তিশালী করে, ক্লান্তি ও দুর্বলতা কমিয়ে শরীরকে এনার্জেটিক করে ও উজ্জীবিত রাখে, পুরুষের যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করে যৌন ক্ষমতা উদ্ধার করে ও বৃদ্ধি করে, তারুন্য বৃদ্ধি করে, তারুন্য ধরে রাখে ইত্যাদি।
ভোরে (ফজরের পর পর) হাঁটতে বেরোনো
ভোরে হাঁটতে বেরোলে দেহমনে প্রশান্তি আসে, মস্তিষ্কে প্রশান্তি আসে, মস্তিষ্ক ভাল্ভাবে কাজ করে, মেজাজ ফুরফুরে থাকে, দেহ মানসিক ও আবেগিকভাবে বিষমুক্ত (Detoxified) হয়, সেই দিনের দিবাগত রাতে ভাল ঘুম হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হয়।
লক্ষ করুন, উপরোক্ত যে সমস্যাগুলো, সেগুলো এমন সমস্যা যা আপনার জীবনকে বিষিয়ে তুলতে পারে। অথচ কোন ডাক্তার কখনো এ সমস্যাগুলো সমাধানের কোন ব্যবস্থাপত্র দেননা। আমার অন্যতম প্রিয় লেখক এস. এম. জাকির হোসেন এক জায়গায় বলেছেন, ডাক্তারদের সবচেয়ে বড় ভুল এই যে, তারা দেহের চিকিৎসা করেন মনকে বাদ দিয়ে।
ফলে যে হবার তাই হয়। আপনার শত শত শারীরিক সমস্যা আছে, যাতে আপনি সাফার করছেন অথচ চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং ডাক্তাররা তা এড়িয়ে যান বা এর কিছু ব্যবস্থা দিতে পারেননা বা বলেন যে, ‘আপনার কোন রোগ হয়নি’। দেহ মনের সার্বিক ভারসাম্যের প্রয়োজনে আপনি অবশ্যই ভোরে হাটবেন।
সকালে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটা
সকালে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটাও দেহমনের সার্বিক ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে দেহের গ্রাউন্ডিং হয় অর্থাৎ মাটির সংস্পর্শে আসে। ফলে শরীরে ইলেকট্রিক চার্জের ভারসাম্য আসে। স্নায়ুবিক উত্তেজনা প্রশমিত হয়, ফলে মনে প্রশান্তি আসে, ডিটক্সিফিকেশন হয়, পায়ের পেশি মজবুত হয়, শরীরে শক্তি আনে, পায়ের তলার প্রেশার পয়েন্ট সক্রিয় হয় ইত্যাদি।
প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া
প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া হলো মানসিক প্রশান্তি চর্চার একটি অংশ। নির্মল কোলাহলমুক্ত নদীর ধারে ও সমুদ্রের তীরে ভ্রমন করা, গাছপালায় ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে হাটা, গাছের নিচে অবস্থান করা, গাছপালাকে স্পর্শ করা, ভাল এবং পজিটিভ কিছু চিন্তা করা, সৃষ্টকর্তার সৃষ্টকুশলাদি নিয়ে সময় নিয়ে ভাবা, বুকভরে নিঃশ্বাস নেওয়া, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ঝেড়ে সুখের কথা ভাবা ও ভিতরে সুখি বোধ করা মানসিক সুখ ও প্রশান্তি এনে দেয়।
মনকে স্থির ও শান্ত রাখতে না পারলে দেহও বিগড়ে যাবে এবং কোন কিছুই নিয়ন্ত্রনে থাকবেনা। আমরা যেভাবে চিন্তা করি এবং জীবন সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গই পোষন করি, আমাদের ব্রেইন সেভাবেই তৈরি হয় এবং আমাদেরকে চালানোর জন্য সেখান থেকেই তথ্য আহরন করে।
মনে রাখবেন, সুখ হল আপনার সুখি হতে পারার মানসিক যোগ্যতা, এর বাইরে সুখ কোথাও নেই। যুগে যুগে জ্ঞানী ব্যক্তিরা একথাই বলে গেছেন।
বরফ থেরাপি করা
বরফ থেরাপি হল কিছু সময় বরফে বা বরফ মিশ্রিত পানিতে ডুবে থাকা। এতে শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি (নমনীয়তা) ও সহনশীলতা বাড়ে, স্নায়ুগুলো শিথিল হয়, সার্বক্ষনিকভাবে সক্রিয় ইমোশনাল স্ট্রেস দূর হয়, উন্নত ঘুমের সহায়ক, প্যারাসিম্পেথেটিক এক্টিভিটি বাড়ে ইত্যাদি।
কফি এনেমা (Coffee Enema) করা
কফি এনেমা পেট অর্থাৎ নাড়িভুড়ি থেকে পুরনো ময়লা পরিস্কার করার উপায়। যেভাবে স্যালাইন ব্যাগ উপরে ঝুলিয়ে রক্তনালিতে স্যালাইন পুশ করা হয়, তেমনিভাবে পায়ুপথে বা পায়খানার রাস্তায় নল ঢুকিয়ে বিশুদ্ধ কফি দানা দিয়ে ফোটানো পানি প্রবেশ করানো হয়। কফির পানি প্রবেশ করানোর ফলে পেটে প্রচন্ড পায়খানার চাপ হয় এবং পুরনো ময়লা বেরিয়ে আসে। কফি এনেমা দৈনিক, সপ্তাহে বা মাসে কতবার নিতে হবে, তার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরন করতে হবে।
কফি এনেমা করলে নাড়িভূড়ি পরিস্কার হওয়ার সাথে সাথে লিভারও টক্সিনমুক্ত হয়। ফলে সারা দেহই টক্সিনমুক্ত হবার পরিবেশ তৈরি হয়। আমরা জানি দেহের প্রায় ৮৫% রোগ হয় পেট থেকে। কফি এনেমার মাধ্যমে কোলন ক্যান্সার সহ পেটের বা পরিপাকতন্ত্রের অনেক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
মানসিক প্রশান্তির চর্চা
আমরা ইতোপূর্বে মানসিক প্রশান্তির চর্চার উপায় হিসাবে সকালে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটা, প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া- এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। সুস্থ বিনোদন, আনন্দদায়ক খেলাধুলা, ভাল টোরিস্ট স্পটে বা গ্রামে বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে মানসিক প্রশান্তি চর্চার হাতিয়ার।
মনে রাখবেন, মানসিক প্রশান্তির জন্য মনের দিকেই তাকাতে হবে অর্থাৎ ভিতরের দিকে। বাহ্যিক বা বস্তুগত উন্নতির মাধ্যমে ১০/২০/৫০ বা ১০০ বছরে কবে মনের প্রশান্তি পাবেন- এই কল্পলোকের কল্পকাহিনী ছেড়ে বেরিয়ে আসুন। চোখকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দিন, ভিতরের দিকে তাকান। বাইরের উন্নতি করেন প্রাচুর্যের জন্য, এতে প্রশান্তি আসবেনা।
আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা
আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা দিয়ে শুরু করুন। কোন কাজ শুরু করার বা শেষ করার যোগ্যতা কোনটাই আপনার হাতে নেই। আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় শুরু ও শেষ আমাদের হাতের মুঠোয়।” [এই মুহুর্তে রেফারেন্সটা হাতের কাছে নেই, দুঃখিত] আপনি শুধু জাস্ট করে যাবেন, আর ফলাফলের জন্য আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবেন। লাইফস্টাইলের সমস্ত ক্রিয়াকান্ডের সুফল আসবে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছায়- এই দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহন করে নিন।
জেনে রাখুন, আল্লাহর উপর নির্ভরতা আপনাকে ভবিষ্যতমুখী চাপ, আকাংখা, আশংকা, বিপদের ভয় ও টেনশন থেকে মুক্তি দেবে। বর্তমানে স্থির থাকার প্রচেষ্টায় এটা একটা বড় পদক্ষেপ। এত ভেবে কি লাভ, সবকিছু ছেড়ে দিননা আল্লাহর হাতে। আর তাঁকেই উত্তম অভিভাবক হিসাবে মেনে নিন। অবশ্যই সফল হবেন।
কল্যান কাজ করা
আপনি হয়ত জানেনই না যে আপনি নিজের প্রতি আসক্ত বা নেশাসক্ত হয়ে আছেন। অর্থাৎ আপনি শুধু নিজের কথাই ভাবছেন। একারনেই আপনি সংকীর্নতার গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে আছেন। এ সংকীর্নটাই কষ্ট।
এ থেকে বের হওয়ার উপায় হল- সমস্ত প্রাপ্তির আশা ত্যাগ করে অপরের জন্য কল্যানমূলক কাজ করা। অপরের জন্য কাজ করলে আপনি তার জন্য না ভেবে পারবেন না। অপরের জন্য ভাবলে আপনি নিজেকে ভুলে যাবেন। আর আপনি এভাবে মুক্ত হয়ে যাবেন। এ মুক্তি মানেই শান্তি, প্রশান্তি। আপনি ততটুকুই সুখি, যতটুকু আত্মসংকীর্নতার কবল থেকে মুক্ত।
দুঃশ্চিন্তা ত্যাগ করা, হাসিখুশি থাকা
দুঃশ্চিন্তা, কষ্ট, ক্ষোভ, রাগ, ঘৃনা, প্রতিশোধ বাসনা ভিতরে পোষে রাখা শুধু মানসিক স্বাস্থ্যেরই ক্ষতি করেনা, অনেক বড় বড় শারীরিক জটিলতারও সৃষ্টি করে। স্থায়ী দুশ্চিন্তা থেকে নিদ্রাহীনতা, স্নায়ুবিক বৈকল্য সৃষ্টি হয় এবং এর পথ ধরে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যাথা সহ অনেক অনেক বড় রোগের পথই প্রশস্ত হয়ে যায়। সুতরাং দুঃশ্চিন্তা ত্যাগ করে হাসিখুশি থাকার অভ্যাস বিল্ড আপ করতে হবে।
ফাংশনাল ফুড খাওয়া
ফাংশনাল ফুড হল এমন খাবার যা ওষুধের মত কাজ করে। আমাদের লাইফস্টাইলের অন্যতম মূলনীতি হবে, “খাবার কে ওষুধ বানানো, ওষুধকে খাবার বানানো নয়। কিছু ফাংশনাল ফুড সরাসরি রোগ সারায়, আবার কিছু দেহের সামগ্রিক সিস্টেম উন্নয়নে সাহায্য করে; যেমন- হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট দেহে সব লবণের ঘাটতি পূরণ করে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে, হলুদ, নারিকেল তেল, গ্রীন টি প্রদাহ দূর করে; বেকিং সোডা দেহের pH কে ব্যালেন্স করে, চিয়া সিড কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করা সহ পেটের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে ইত্যাদি।
রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি, আপনার শারীরিক মানসিক সিস্টেম ডেভালাপমেন্টের জন্য আপনার সাধ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় ফাংশনাল ফুড খেতে পারেন।
প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট নেওয়া
সাপ্লিমেন্ট মানে রোগ সারানোর ওষুধ নয়, তবে ওষুধের মতই। সাপ্লিমেন্ট দেহের বিভিন্ন সিস্টেম বা শরীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ এর উন্নতির জন্য গ্রহন করা হয়। যেমন- ভিটামিন ডি বৃদ্ধির জন্য দেওয়া হয় D-VINE, পেটে ভাল ব্যাক্টেরিয়া গ্রু করার জন্য Acteria, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি বৃদ্ধির জন্য দেওয়া হয় Immune plus ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরনের পাশাপাশি দেহের সার্বিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট (Supplement) ও গ্রহন করা প্রয়োজন।
সর্ব অবস্থায় সৎ থাকা
আমাদেরকে সর্ব অবস্থায় সৎ থাকতে হবে। অসৎ মানুষ অপরাধভোগে ভোগে। যার থেকে মানসিক বিশৃংখলা, তার থেকে দৈহিক সমস্যা। সুতরাং শারীরিক মানসিক সুস্থতার জন্য সর্ব অবস্থায় সৎ থাকা একটি কার্যকরি লাইফস্টাইলের দাবি।
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা
‘আলহামদুলিল্লাহ’ অর্থ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। একথা তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু আল্লাহর প্রতি শোকর বা কৃতজ্ঞতা মানে কি এবং দেহ মনে এর ইমপ্লিকেশনই বা কি? আল্লাহর প্রতি শোকর মানে হল- কাজের পূর্বে আমি আল্লাহর প্রতি তায়াক্কুল করেছিলাম। এখন কাজ করার যে ফলাফল আসবে- তা ভাল হোক বা মন্দ হোক তার সবকিছুর জন্যই আল্লাহর প্রশংসার দাবীদার।
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা বা শোকর আদায় করার ফলে দেহ মনে ভারসাম্য ফিরে আসে। অনেক কষ্ট বা পরাজয়েও যেমন মানসিক স্থিতি ও শান্তি বজায় রাখা যায়, আবার অনেক সাফল্য বা আনন্দেও সীমালঙ্ঘনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
সুতরাং আমাদেরকে সর্বদা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে বা আলহামদুলিল্লাহ বলতে হবে।
ঘুনে ধরা দেহে নতুন ফাউন্ডেশন- অর্থ কি?
এতক্ষনের আলোচনায় এটা কি স্পষ্ট হয়ে গেলনা যে, ‘ঘুনে ধরা দেহে নতুন ফাউন্ডেশন’ এর অর্থ কি? একটি বিল্ডিং যখন জরাজীর্ণ হয়ে যায়, তখন সেটাকে ভেঙ্গে নতুন ফাউন্ডেশন দিয়ে নতুন করে তৈরি করা হয়। এখানেও কি তাই ঘটছেনা?
প্রিয় পাঠক, উপরের লাইফস্টাইল পরিবর্তনের যে হাতিয়ারগুলো বর্ননা করা হল, এগুলো যদি আপনি অনুসরন করেন, তাহলে কি আপনার দেহটা আর পুরনো থাকবে? একেবারে নতুনের মত ফাংশন করতে শুরু করবেনা?
আরো একটি ফ্যাক্ট আছে, রোজা রাখা বা ফাস্টিং এর মাধ্যমে আমাদের দেহে যে অটোফেজি প্রক্রিয়া চালু হয়, এই অটোফেজির সাথে যদি আপনি সুস্থ খাবার খেয়ে যান, তাহলে দেহের প্রতিটি কোষ পালটে যাবে এবং নতুন হয়ে যাবে। তার মানে আপনি আবার নতুন জীবন ও যৌবন লাভ করবেন। আপনি আবার তরুন হয়ে উঠবেন। যৌন স্বাস্থ্যও হয়ে উঠবে একেবারে তরুনের মত। একে আপনি কি বলবেন? পুরনো দেহে নতুন ফাউন্ডেশন নয় কি?
ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির বলেছেন, সব নিয়মকানুন ঠিকঠাক মত মেনে চললে দেহের কোষগুলো সব বদ্লে নতুন কোষ আসতে দুই থেকে আড়াই বছর লাগতে পারে। আর এভাবেই আপনি জে. কে. লাইফস্টাইল (J.K. Lifestyle) এর উছিলায় রোগমুক্ত-ওষুধমুক্ত তারুন্যে উদ্দীপ্ত সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবেন, ইনশাল্লাহ।