ঘুমের অশান্তি থেকে প্রশান্তির পথে- মিলিয়ন ডলারের অভিযান

ঘুমের অশান্তি ও প্রশান্তি

ঘুমের অশান্তিকে মনে হয় জাহান্নামের পূর্বাভাষ আর ঘুমের প্রশান্তি বেহেস্তের সুবাতাস। আপনি কোনটিতে আছেন- অশান্তিতে না প্রশান্তিতে? নাকি কোনটাতেই নেই, মাঝামাঝি একটা পর্যায়ে আছেন?
আপনি কি ঘুম নিয়ে এভাবে ভেবেছেন কখনো? ভাবেননি। ঘুম যখন যতটুকু হয়- এভাবেই মেনে নিয়েছেন। রাত পার হলে পৃথিবীর কোলাহলে মিশে যাচ্ছেন, মিশে থাকছেন পরবর্তী ঘুমের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত।

ঘুমের অশান্তি ও প্রশান্তি

কিন্তু ঘুমের অশান্তি মানে জীবনের অশান্তি; ঘুমের প্রশান্তি মানে জীবনের প্রশান্তি। শুধু আজকের জন্য নয়। নিয়মিত ঘুমের বিশৃংখলা, অনিয়ম, ঘুমের অতৃপ্তি, অনিদ্রা আপনার জীবনটাকে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতা, অসুখ আর অশান্তির দিকে নিয়ে যায়।

আচ্ছা সত্যি করে বলুনতো, ঘুম নিয়ে আপনি কি এভাবে ভেবে দেখেছেন কখনো? দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আপনি যে ঘুমাচ্ছেন, তা কি আল্লাহর দেওয়া আপনার এ দেহের চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট? নাকি ঘুমের অপূর্ণতা, অস্থিরতা, ঘুমহীনতা আপনাকে দুরারোগ্য ব্যাধির দিকে নিয়ে যাচ্ছে?

নাকি আপনি এই মুহুর্তেই সেই মরণঘাতি রোগে আক্রান্ত?

আশ্চর্যের বিষয় হল, আপনি যদি ঘুমজনিত কোন রোগে আক্রান্ত হয়েও থাকেন, তবুও তার দোষ আপনি ঘুমের উপর চাপাবেননা। এ দোষ আপনার নয়, স্বয়ং আপনার ডাক্তারও তা চাপায়না।

হয়ত রোগ নিয়ে হাসপাতালের এক ডিপার্টমেন্ট থেকে অন্য ডিপার্টমেন্টে দৌড়াদৌড়ি করছেন। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ছেড়ে নিউরোলজিস্ট, নিউরোলজিস্ট থেকে লিভার বিশেষজ্ঞ, সেখান থেকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনি ঘুণাক্ষরেও ভাবেননা যে এই রোগের মূল কারন ঘুমের অভাব। ডাক্তার যদিও ভাবেন, সমাধান হিসাবে ঘুমের ওষুধ দিয়েই ক্ষান্ত হন।

কিন্তু অনিদ্রা আর নিদ্রাহীনতার অত্যাচারে আপনি ৩০, ৪০, ৫০ বছরে দেহের মধ্যে যে ভয়াবহ জটিলতা তৈরি করে ফেলেছেন, সেটা কি ট্যাবলেট দিয়ে দূর হবে? হবেনা। কোনদিন হয়নি। ভবিষ্যতেও এমন কিছু আবিষ্কারের সম্ভাবনা কম, যা আপনার দেহের যুগ যুগের ঘুমের ঘাটতি পূরণ করে দেবে। তাহলে-

প্রশ্নঃ কিভাবে ঘুমের এ ঘাটতি পূরণ করা যাবে?

প্রশ্নঃ কিভাবে দেহের ঘুমজনিত বিশৃংখলাকে মেরামত করা যাবে?

প্রশ্নঃ কিভাবে ঘুমের প্রশান্তির পথে হাঁটা যাবে?

উত্তরঃ উত্তর হল- ঘুমের মাধ্যমেই। অন্য কোন উপায় নেই। আপনি ঘুমজনিত রোগে সফল অপারেশন করাতে পারেন, সফল অঙ্গ ট্রান্সপ্ল্যান্ট করাতে পারেন, সুস্থতার জন্য কোটি টাকা ব্যয় করতে পারেন। কিন্তু ঘুমের অভাব ঘুম দিয়েই পূরণ করতে হবে। ঘুমের প্রশান্তির অভিযানে সফল হওয়ার অন্য কোন পথ নেই।

তাহলে চলুন এ পর্যায়ে আমরা ঘুমের বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে কিছু সহজ কথা জেনে ফেলি। পরবর্তীতে আমরা কিভাবে প্রশান্তির ঘুম ঘুমাতে পারি এবং যুগ-যুগান্তের প্রতিষ্ঠিত অভ্যাসের প্যাটার্ন ভেঙ্গে প্রশান্তির ঘুমে ফিরে আসতে পারি, সে বিষয়টা সহজভাবে তুলে ধরব।

ঘুম আসলে কি?

ঘুম হল শরীর ও মনের বিশ্রামের একটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক পদ্ধতি। ঘুমের সময় মানুষের উত্তেজনায় সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ঘুমের মাধ্যমে শক্তি পুনরুদ্ধার হয়। কিন্তু ঘুম কেন হয়, এর একেবারে মৌলিক কারনটা এখনো বিজ্ঞানীদের অজানা।

ঘুমের পরিবর্তন ও প্রক্রিয়া যা বাইরে থেকে দেখা যায় শুধু তাই নয়। ঘুমের সময় শারীরবৃত্তীয় কর্মকান্ডের বিরাট পরিবর্তন ঘটে। ঘুমের সময় শরীরের লিভিং অরগানিজ্‌মগুলো (Living organisms); যেমন-ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি সক্রিয় হয়ে উঠে এবং ঠিকমত কাজ করতে পারে। ফলে ঘুমের সময় ড্যামেজ রিপেয়ার হয়, ইনজুরি রিপেয়ার হয়, ডিটক্সিফিকেশন হয়, হাড় গঠিত হয়, মাংশপেশি গঠিত হয় এবং ইমিউনি সিস্টেম ডেভেলাপ হয় এবং আরো অনেক কিছু। এর ফলে দেহটি নতুন, সজিব, প্রানবন্ত ও কর্মশক্তির উদ্দীপনায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।

প্রশ্নঃ অশান্তির ঘুম আর প্রশান্তির ঘুম বলতে এখানে কি বুঝানো হয়েছে?

উত্তরঃ আমরা কমন সেন্স ব্যবহার করেও এ বিষয়টাকে বুঝতে পারি। আর বৈজ্ঞানিক তথ্য ব্যবহার করে এটাকে আরো স্পষ্ট করে জানা যায়; যেমন

অশান্তির ঘুম:   অশান্তির ঘুম হল এমন ঘুম যাতে দেহের ক্লান্তি দূর হয়না, স্নায়ুগুলি উত্তেজিত থাকে, মস্তিষ্কের বিশ্রাম হয়না। এক্ষেত্রে চোখ বন্ধ থাকলেও শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকান্ড ঠিকমত চলেনা। ফলে ঘুম থেকে জাগলেও মাথা গরম থাকে, সারাদিন অতৃপ্তি- অস্থিরতা থাকে, মাথা ধরা থাকে, মেজাজ খিটখিটে হয়, ক্লান্তি চেপে থাকে ইত্যাদি। কখনো কখনো সারা রাতেও ঘুমের ভাব সৃষ্টি হয়না, হলেও ঘুম গভীর হয়না। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুচিন্তা, মানসিক চাপ (Stess) এর কারনে দেহটা সক্রিয় মোডে থাকে। দিনের পর দিন এরকম চলতে থাকলে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে।

প্রশান্তির ঘুম:   প্রশান্তির ঘুম হল ডেল্টা লেভেল ডীপ স্লীপ (Delta level deep sleep) বা স্বপ্নবিহীন গভীর ঘুম। এ ঘুমে শরীর ও মন পূর্ণাঙ্গ শিথিল থাকে। ঘুমের সময় আর জেগে উঠার সময়ের মধ্যে কোন পার্থক্যই মনে থাকেনা। এ ঘুমে দেহের জন্য উপকারী সমস্ত শারীরবৃত্তীয় কাজগুলো চলে, লিভিং অরগানিজ্‌মগুলো ঠিকমত কাজ করে। দেহটা পূর্ণাঙ্গ বিশ্রামের প্রশান্তি ও সুখ পায়। ঘুমের পর দেহে চনমনে ভাব সৃষ্টি হয় ও কর্মোদ্দীপনায় ভরে উঠে। এ যেন হাশরের মাঠে জেগে উঠা মানুষের অনুভূতির মত, যারা হাজার বছর আগে মারা গেলেও বলবে; আমাদেরকে কে জাগাল, আমরা তো মাত্র কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছি।

আমি কেন প্রশান্তির ঘুম ঘুমাতে পারিনা?

দীর্ঘমেয়াদে ঘুমের অতৃপ্তি, অস্থিরতা, অনিদ্রা, ঘুমহীনতা- এগুলো হল সভ্যতার বর্জ্য বা আধুনিক সভ্যতার রোগ। প্রযুক্তি আপনাকে এত ‘অলৌকিক (miraculous)’ কিছু দিয়েছে অথচ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে ক্যান্সার দেবেনা, এইডস দেবেনা, হার্ট ফেড়ে ঠিক করার অসুখ দেবেনা, তা তো হয়না।

সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অনেকে দিনকে রাত আর রাতকে দিন করে নিয়েছে। তার পায়ের নিচে চাকা লাগানো। সে শুধু দৌড়াচ্ছে আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই খাচ্ছে। ঘুমানোর সময় তার নেই। জানা যায়, লাস ভাগাস শহরের ভিতরে-বাইরে, দিনে-রাতে সর্বক্ষন আলো জ্বালানো থাকে। অথচ ঘুমের জন্য প্রয়োজন গাঢ় অন্ধকার। আলো জ্বেলে ঘুমানো ক্যান্সার কোষ সৃষ্টির জন্য দায়ী।

এভাবেই মানুষ নিজেকে আল্লাহর দেওয়া বিধানের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। মানুষ-প্রকৃতির স্বাভাবিক বন্ধন ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে। যাই হোক, যেসব স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কারন প্রশান্তিদায়ক ঘুমের প্রতিবন্ধক তা একনজরে দেখে নিই-

  • উদ্বেগ-উৎকন্ঠা (Tension)
  • মানসিক চাপ বা Mental stress
  • ক্যাফেইন এবং এলকোহল পান
  • ডায়াবেটিস বা রক্তে চিনি বেশি থাকা
  • ইনসুলিন বেশি নিঃসৃত হওয়া
  • প্রদাহ (Inflamation) বেশি থাকা
  • আলো ও কোলাহলের মধ্যে ঘুমানো
  • অনিদ্রা রোগ বা ইনসোমনিয়া (Insomnia)
  • দীর্ঘমেয়াদী রোগ; যেমন-ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, বাত-ব্যাথা, এসিড রিফ্লাক্স (GRD) ইত্যাদি
  • বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন (Depression)
  • অতিরিক্ত ওষুধ গ্রহন
  • স্নায়ুবিক উত্তেজনা- মোবাইল, টিভির দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকা ইত্যাদি
  • ঘুমের উপকারিতা ও ক্ষতি সম্পর্কে অজ্ঞতা

ঘুমের বিশৃংখলায় কি কি রোগ হয়

ঘুমের বিশৃংখলায় কিছু রোগব্যাধি সৃষ্টি হয়, আবার অনেক ধরনের শারীরিক-মানসিক জটিলতার সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে বেশ কিছু দুরারোগ্য রোগের জন্ম দেয়। চলুন এক নজরে দেখে নিই।

ঘুমের কারনে সৃষ্ট শারীরিক- মানসিক জটিলতা

  • দুর্বলতা রোগ দেখা দেয়
  • শারীরিক মানসিক অবসন্নতা ও বিষন্নতা বৃদ্ধি পায়
  • হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়
  • উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে
  • ইনসুলিন উৎপাদন ব্যাহত হয়, ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে
  • হৃৎপিন্ড ও রক্তনালী বিশ্রাম পায়না, ফলে হার্টের (Cardiovascular) সমস্যা বৃদ্ধি পায়
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immune system) নষ্ট হয়
  • মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়না, ফলে মস্তিষ্কের সচলতা নষ্ট হয়
  • হাড় দুর্বল হয়
  • পেশি (Muscle) ভালভাবে গঠিত হয়না
  • হযমে সমস্যা হয়

ঘুমের কারনে সৃষ্ট রোগ-ব্যাধি

ঘুমের disorder থেকে বেশ কিছু রোগ ডেভেলাপ হয় এবং রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে; যেমন-

  • ডায়াবেটিস
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • হৃদ্‌রোগ
  • ক্যান্সার
  • স্থূলতা
  • স্নায়ুবিক রোগ- আলঝেইমার (Aljheimer’s Disease)
  • ইনসোমনিয়া (Insomnia) বা অনিদ্রা
  • বিভিন্ন মানসিক রোগ
  • হজমের সমস্যা থেকে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার কারনে যে কোন রোগের ঝুঁকি
  • আত্মহত্যার প্রবণতা

ঘুমের কি কি উপকারিতা

ঘুমের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যায়না। ঘুমের ঘাটতি না থাকলে বা ভাল ঘুম হলে শরীর ও মন স্বাভাবিক গতিতে চলবে। সমস্ত দেহ ও মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। শরীর দুর্বল বোধ হবেনা। রক্তনালী ও হৃৎপিন্ড পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাওয়ার ফলে সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে। ফলে হার্ট রোগমুক্ত থাকবে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অল্পতেই অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

ভাল ঘুম হলে মস্তিষ্ক ভালভাবে কাজ করার ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্ক চুপসে যাওয়া থেকে রেহাই পায়। ফলে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। ঘুমে শরীরের বিপাকীয় কার্যাবলি ঠিকভাবে চলে। ফলে পেটের স্বাস্থ্যও ভাল থাকে এবং পেটের থেকে যে রোগগুলো হয় (পেটের থেকে প্রায় ৮৫% রোগ হয়), তার ঝুঁকি কমে।

ভাল ঘুমের ফলে শরীরের আহত স্থান দ্রুত রিপেয়ার হয়, ড্যামেজ রিপেয়ার হয়, হিলিং হয়, দেহ বিষমুক্ত হয়, হাড় ভালভাবে গঠিত হয় এবং হাড় ক্ষয় রোধ হয়, মাংসপেশি সুগঠিত হয়। এছাড়া ক্যান্সারের একটি শক্তিশালি কারন হল ঘুমের ঘাটতি। ভাল ঘুমের ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে। শরীরের প্রদাহ কমে। ফলে প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কমে। উদ্বেগ-উৎকন্ঠা, দুশিন্তা, হতাশা, ক্লান্তি দূর হয়।

সবচেয়ে বড় কথা, ভাল ঘুমে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি ফিল হয়। দেহে ভাল লাগা ঘিরে থাকে সারাক্ষন। জীবনটাকে সার্থক মনে হয়।

এছাড়াও ভাল ঘুমের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে।

কিভাবে প্রশান্তির ঘুমে ফিরব?

আপনাকে যদি ঘুমের ডিসঅর্ডার (Disorder) বা বিশৃংখলায় পেয়ে বসে, তাহলে নিশ্চিত যে আপনি ইতোমধ্যেই উপরে উলেখিত রোগগুলোর অনেকগুলোই ইতোমধ্যেই অর্জন করে ফেলেছেন। হয়ত কোনটা ভালভাবে প্রকাশ পায়নি বা প্রকাশ পেলেও রোগটাকে আপনি বুঝতে পারেননি বা জীবনের অংশ হিসাবেই মেনে নিয়েছেন। এই প্রবন্ধ পড়ে যদি আপনি আপনার দেহের ভিতরে জমা ময়লা-পঁচা-গলা আবর্জনা ও প্যাঁচ দেখতে পান এবং আপনার যদি এই চেতনা জাগে যে এই এই ভয়াবহ দুর্বিসহ বিপদ থেকে বের হতে হবে, তাহলে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে হবে। হ্যাঁ, এটাই সত্যি। যুদ্ধে জেতা ছাড়া ঘুমের এই সংকট থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়।

কারন, এই সমস্যা একদিনে তৈরি হয়নি এবং তার সমাধানও দ্রুত সম্ভব নয়। বছরের পর বছর ধরে দেহের ভিতরে ঘুমের যে অবৈধ অভ্যাসের সিস্টেম, নেটওয়ার্ক ও প্যাটার্ন তৈরি হয়ে আছে, সেগুলো আপনাকে তা করতে দেবেনা। যুগ যুগের এ প্রতিবন্ধকতার দেয়াল ছিন্ন করে প্রশান্তিময় ঘুমের স্বাভাবিক-প্রাকৃতিক ধারায় ফিরে আসা সহজ কাজ নয়। নিঃসন্দেহে এটা মিলিয়ন ডলারের চ্যালেঞ্জ। এ অভিযানে জিততে হলে দৃঢ়সংকল্প হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে কাজে নেমে পড়তে হবে। আপনাকে জিততেই হবে, হাল ছাড়া যাবেনা। মনে রাখবেন, আপনি কিন্তু বিনা পয়সায় কোটি তাকার চিকিৎসা করতে যাচ্ছেন।

যাই হোক, প্রশান্তিময় ঘুমে ফিরা আসার পদ্ধতিটা আমরা হাতে-কলমে প্র্যাক্টিক্যালি দেখিয়ে দেব, তবে এই প্রবন্ধে নয়। এর জন্য আমাদের আছে আলাদা একটি পোস্ট। যাতে রয়েছে এ বিষয়ের পারফেক্ট আয়োজন। নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে দেখে নিন-

লিঙ্ক: টাকায় ঘুম কেনা যায়না- কিভাবে প্রশান্তির ঘুম ঘুমাবেন?



ঘুমঃ বিনা পয়সায় মিলিয়ন ডলারের চিকিৎসা

এতক্ষণ যদি এই আর্টিক্যালটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, পারফেক্ট ঘুম মানে আসলেই মিলিয়ন ডলারের চিকিৎসা। আপনার কি পর্যাপ্ত টাকা নেই? না থাকে তো সেটা আলাদা কথা। কিন্তু, আপনি কি এমন কারো কথা জানেন না, যাদের কাড়ি কাড়ি টাকা আছে এবং তারা ঘুমজনিত কারনে সৃষ্ট রোগ (যেমন- ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, হৃদ্‌রোগ ইত্যাদি) থেকে বাঁচতে মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে? ক্ষেত্রবিশেষে তবুও রোগ থেকে বাঁচতে পারেনি?

একটি গবেষনা বলছে, উন্নত বিশ্বে যত রকম রোগ-ব্যাধিতে মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, তাদের অনেকগুলোর সঙ্গেই অনিদ্রার বেশ গুরুতর বা মোটামুটি সম্পর্ক রয়েছে। এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে মানুষই একমাত্র প্রাণি যারা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদেরকে ঘুম থেকে বঞ্চিত রাখে। অন্য কোন প্রাণি তা করেনা।

সর্বশেষ, আপনি যত কম ঘুমাবেন, আপনার আয়ু তত কমবে। সুতরাং আজ থেকেই প্রশান্তির ঘুমের ধারায় ফিরে আসতে আমাদের নির্দেশনাগুলো অনুসরন করাই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?

মন্তব্য করুন