
ফ্রি রেডিক্যাল (Free Radical) কথাটি আমরা প্রায়শঃই শুনে থাকি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ ও কথাবার্তায়। কিন্তু এই মেডিক্যাল টার্মটি না বুঝার কারনে এ সংক্রান্ত কথাবার্তা আমাদের বোধগম্য হয়না বা আমরা বুঝিনা। আমরা শুনে থাকি যে, শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল থাকাটা ক্ষতিকর এবং এ থেকে বেঁচে থাকার উপায় দেখিয়ে দেওয়া হয়।
আসলে সাধারন স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য ফ্রি রেডিক্যাল (Free Radical) যে কি সেটা রসায়ন বিজ্ঞানের ভাষায় না বুঝলেও চলবে। এ সম্পর্কে একটি মোটামুটি বা সম্যক ধারনা রাখাই যথেষ্ট। যাই হোক, ফ্রি রেডিক্যাল (Free Radical) সম্পর্কে এই পোস্টে আমরা সাধারন বোধগম্য ভাষায়ই Clarify করব। এবং ফ্রি রেডিক্যাল থেকে মুক্ত থেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এডিয়ে চলতে সাহায্য করব, ইনশাল্লাহ।
ফ্রি রেডিক্যাল (Free Radical) কি?
অণু-পরমাণু সম্পর্কে আমাদের একটি সম্যক ধারনা আছে। অনু হল পদার্থের এমনকি আমাদের দেহেরও ক্ষুদ্রতম একক, যা অনুবীক্ষন যন্ত্র ছাড়া খালি চোখে দেখা যায়না। এক বা একাধিক পরমাণু দিয়ে অণু গঠিত। আমাদের দেহের আনবিক পারমানবিক পর্যায়ে এবং কোষীয় পর্যায়ে প্রতিনিয়ত ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে চলেছে। ফ্রি রেডিক্যাল হল এই ক্রিয়া বিক্রিয়ারই একটি অস্বাভাবিকতা।
রেডিক্যাল (Radical) বা মুলক হল এক প্রকার উচ্চতর সক্রিয় অণু যা আমাদের শরীরেও স্বাধীনভাবে ঘুরাফেরা করতে পারে, যা ফ্রী রেডিক্যাল (Free Radical) নামে পরিচিত। প্রসেস্ড্ ফুড, খাদ্যে কেমিক্যাল, প্রদাহ সহ নানা কারনে শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল সৃষ্টি হয়। এই অস্থিতিশীল মুক্ত অণু বা ফ্রি রেডিক্যাল এর পরনাণুতে ইলেক্ট্রনের ঘাটতি থাকে।
আর এই ঘাটতি পূরণ করতে শরীরের ডিএনএ, প্রোটিন এবং লিপিড (চর্বি) এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কোষীয় উপাদান থেকে ইলেক্ট্রন চুরি করে নেয়, যার ফলে এইসব উপাদানগুলোও ইলেক্ট্রন হারিয়ে অস্থিতিশীল তথা ফ্রি রেডিক্যালে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এই অবস্থাকে বলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস। শুরু হয় শরীরের জন্য ক্ষতিকর ও জটিল রোগ সৃষ্টিকারী অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর চেইন বিক্রিয়া।
যাই হোক, দেহে ফ্রি রেডিক্যাল (Free Radical) থাকার কারনে বড় বড় স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হয়, যা আমরা ধারাবাহিকভাবে দেখব।
দেহে ফ্রি রেডিক্যাল (Free Radical) থাকার কারনে কি ঘটে?
- অকাল বার্ধক্য
- চেহারায় বয়সের ছাপ
- ক্যান্সার
- হৃদরোগ
- প্রদাহজনিত রোগ
- ডায়াবেটিস
- চোখের রোগ
- পারকিনসন’স ডিজিজ
- পারকিনসন’স ডিজিজ
- রক্তের শিরা উপশিরা শক্ত হয়ে যাওয়া
কি কি কারনে দেহে ফ্রি রেডিক্যাল বা মুক্ত রেডিক্যাল তৈরি হয়?
- স্বাভাবিক বিপাকীয় কার্যকলাপ থেকে হতে পারে
- দূষণ থেকে, যে দূষণের সাগরে আমরা ডুবে আছি
- বিকিরণ- সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি এবং অন্যান্য ধরনের বিকিরণ থেকে
- ধূমপান থেকে
- শিল্প রাসায়নিক এবং কীটনাশক, যে থেকে আমরা কিছুতেই মুক্ত থাকতে পারছিনা
- প্রদাহ (Inflammation) থেকে
- মানসিক চাপ থেকে
- প্রক্রিয়াজাত খাবার (প্রসেস্ড ফুড) এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য থেকে
- অতিরিক্ত ব্যায়াম থেকে
কিভাবে ফ্রি রেডিক্যাল বা মুক্ত রেডিক্যাল থেকে বেঁচে থাকা যায়?
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল ফ্রি রেডিক্যাল এর বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক সুরক্ষা। এগুলি এমন অণু যা নিজেরাই অস্থির না হয়ে একটি মুক্ত র্যাডিক্যালকে একটি ইলেকট্রন দান করতে পারে, এইভাবে মুক্ত র্যাডিক্যালকে নিষ্ক্রিয় করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের চেইন বিক্রিয়া ভেঙে দেয়।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহেও প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়। সেটা এছাড়া আমরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাদ্য গ্রহনের মাধ্যমে ফ্রি রেডিক্যাল থেকে বেঁচে থাকতে পারি।
এছাড় খালি পায়ে নিয়মিত ঘাসে বা মাটিতে হাঁটার মাধ্যমে ফ্রি রেডিক্যাল দূর করা যায়।
প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়- এরকম কিছু খাদ্যের তালিকা দেখে নিন-
বেরি (berries), চেরি (cherries), সাইট্রাস জাতীয় ফল, Prunes, গাঢ় সবুজ শাক সবজি, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, অলিভস, বাদাম, মাছ, ভিটামিন-ই, ভিটামিন- সি, Turmeric, Green tea, Melatonin, পিয়াজ, রসুন ইত্যাদি।
উপসংহার
উপসংহারে বলা যায়, আপনার শরীরে মুক্ত র্যাডিক্যাল আছে কিনা বাহ্যিকভাবে তা বুঝার উপায় নেই। তাই ফ্রি রেডিক্যাল এর প্রভাবে সৃষ্ট রোগ থেকে বেঁচে থাকতে সব সময় খাদ্য আমাদের তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার রাখতে হবে